প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধের বিষয়ে রুল প্রস্তুত করা হবে কি না- এ বিষয়ে আদেশের জন্যে আগামী বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। এদিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে নতুন করে নোটিশ ইস্যু করতে হবে কি না- বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে রুল শুনানির আবেদন শুনানিতে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই দিন নির্ধারণ করেন। তবে এদিন শুনানিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় এক পক্ষ অপর পক্ষকে বিভিন্ন বিষয়ে কটূক্তি ও মন্তব্য করেন।
আদালতে এদিন রিটের রুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম ও অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সজলসহ আরও অনেক আইনজীবী।
এর আগে অনলাইনসহ সব গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞার রুল শুনানির জন্য দিন ঠিক করতে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে যান সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। অপরদিকে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে যান তারেক রহমানের পক্ষে।
এ সময় হাইকোর্ট জানতে চান, তারেক রহমানকে তো নোটিশ দেওয়া হয়নি, কীভাবে রুল শুনানি হবে? জবাবে রিটকারি আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উনাকে কোনো ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। তবে এর তীব্র বিরোধিতা করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগপন্থি এক আইনজীবী তারেক রহমানকে পলাতক বলার সঙ্গে সঙ্গেই এজলাসে হট্টগোল শুরু হয়। চলে বাকবিতণ্ডা।
পরে হাইকোর্ট বলেন, রুলস অনুযায়ী অবশ্যই নোটিশ দিতে হবে তারেক রহমানকে। তবে সেটা কোন প্রক্রিয়ায় তার উপায় খুঁজতে হবে। বিকল্প পদ্ধতি বের করতে হবে। আদালত বলেন, এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার।
এ সময় বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা যেহেতু এ মামলার শুনানিতে এসেছেন, এক অর্থে তো আপনারা নোটিশ পেয়ে গেছেন।
জবাবে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য এখানে এসেছি। নোটিশ পেয়ে নয়।
এরপর তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতে শুনানি করতে গেলে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা বিরোধিতা করেন। তখন আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা বলেন, তারেক রহমান পলাতক, তার পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করতে পারবেন না। এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা আদালতকে বলেন- আমরা সহযোগিতা করতে এসেছি।
তখন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিক বিষয় আদালতে আনা উচিত হবে না। রাজনৈতিক বিষয় কোর্টের বিষয় নয়। একপর্যায়ে আওয়ামীপন্থি কয়েকজন আইনজীবী তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত বলেন। তখন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরাও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এসময় আদালত কক্ষেই দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, তির্যক মন্তব্য ও হট্টগোল হয়। এক পর্যায়ে আদালত ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের আইনজীবীরা শান্ত হন।
এর আগে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধের বিষয়ে জারি করা রুল শুনবেন বলেছিলেন হাইকোর্ট। এ কারণে রুল প্রস্তুত হওয়ার পর আবেদনকারীদের আসতে বলেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেন।
রিটকারী আইনজীবীরা গণমাধ্যম, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ সব মাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধ সংক্রান্ত রিটের বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য ওইদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে প্রার্থনা জানান। তখন হাইকোর্ট বলেন, রুল তো এখনো প্রস্তুত হয়নি। আগে রুল প্রস্তুত হোক, তখন আদালতে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানিতে ওঠে।
এ বিষয়ে ওইদিন অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জারি করা রুলের জবাব সবাই দিলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো রুলের জবাব দেননি। এ কারণে এখনো রুলটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়নি। তাই সবকিছু মিলিয়ে রুলটি প্রস্তুত হওয়ার পর হাইকোর্ট আমাদের আবেদন নিয়ে যেতে বলেছেন। তারপর শুনানি করবেন।