কওমী মাদরাসাঃ দেশ ও জাতির আশার আলো

পৃথিবীর বুকে বুকে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোর মাঝে অন্যতম ও সর্বোত্তম প্রতিষ্ঠান হলো কওমী মাদরাসা, যার নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ থেকে প্রেরিত মানবতার অগ্রদূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যার অমীয় সূধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন হযরত ইবনে আব্বাস রা., হযরত ইবনে মাসউদ রা., হযরত আবু হুরায়রা রা., সৃষ্টি হয়েছেন হযরত ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ রহ.প্রমুখ আইম্মায়ে কেরাম। যে কারখানা থেকে তৈরি হয়েছেন ইবনে বতুতা, ইবনে সীনা এবং ইমাম গাযালীর মত গবেষক আলেমে দ্বীন।
এঁদের উত্তরসূরীরাই জাতির ক্রান্তিলগ্নে ইংরেজ বেনিয়াদের হাত থেকে ধর্ম, দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে গড়ে তুলেন দারুল উলুম দেওবন্দ। আর তার অনুকরণে গড়ে উঠে হাজার হাজার কওমী মাদরাসা। দেশপ্রেমিক এই আলেমগণের রোনাজারি আহাজারিতে তৈরি হন ও নিঃস্বার্থ সমাজসেবী একদল ছাত্র সমাজ। তাদের ত্যাগ ও কোরবানী এবং বুকের তাজা খুনের বদৌলতে ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা।
কওমী মাদরাসা জাতিকে শুধু স্বাধীনতাই উপহার দেয়নি বরংপ্রতি বছরই উপহার দেয় স্বার্থত্যাগী সচেতন একদল কর্মনিষ্ট কর্মী, যারা প্রিয় মাতৃভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী অগ্রাসী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষার দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করছেন।
কওমী শিক্ষার্থীদের পরিচয় হল তারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনূগত ও আস্থাশীল, সুন্নাতে নববীর পূর্ণ অনুরক্ত ও অনুসারী। এদের শিক্ষা ব্যবস্থা মানব গবেষণা প্রদত্ত নয় বরং আল্লাহপ্রদত্ত, যার আবেদন করেছিলেন জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ. সন্তানের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ-শান্তি এবং উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা ভেবে। আর প্রার্থিত সেই শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচি ছিল “কোরআনের তিলাওয়াত, মানুষের চরিত্র শুদ্ধি এবং কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষাদান”। আল্লাহ্ তা’আলা এই প্রার্থনা কবুল করলেন এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই পাঠ্যসূচী দিয়ে প্রেরণ করলেন। এরপর সাড়ে চৌদ্দশত বছরের দীর্ঘপথ অতিক্রম করে যুগ পরম্পরায় এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের পর্যন্ত পৌছে দেন সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন তাবয়ে তাবেঈন এবং সালফে সালেহীন (রিযওয়ানিল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন)। সুতরাং বিজ্ঞানের সামনে অজ্ঞান হয়ে যারা কওমী মাদরাসা সম্পর্কে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার অবান্তর অভিযোগ তুলেন তারা মূলত এই শিক্ষা ধারার লক্ষ উদ্দেশ্য সম্পর্কেই বেখবর।
বস্তুত এই শিক্ষা আহরণ করে এবং নববী আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কওমী শিক্ষার্থীরা হন ভদ্র, সভ্য, নম্র-বিনয়ী এবং মানবিক উন্নত চরিত্রাবলীর অধিকারী। ফলে কওমী শিক্ষার্থীরা ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে পাশ্চাত্বের অন্ধ অনুকরণ করেন না। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বেড়াজালে গাঁ ভাসিয়ে দেন না এবং আকাশ মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার নোংরামী, বেহায়াপনা, নগ্নতা ও অশ্লীলতায় নিমগ্ন হন না। কওমী শিক্ষার্থীরা অল্পে তুষ্ট, পরকল্যাণে সচেষ্ট, দশ ও দেশের জন্য উৎসর্গিত এবং উম্মাহ ও জাতির প্রতি দরদ, মায়া এবং সম্প্রীতি ও ভালবাসা প্রদর্শনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তাই অভাব-অনটন ও ক্ষুধা, অনাহারে ক্লিষ্ট থাকা সত্বেও কওমী শিক্ষার্থীরা লোভ-লালসা, সন্ত্রাস, হানাহানি, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কালো বাজার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো এর একটি উপমাও পেশ করতে সক্ষম হবে না।
কওমী শিক্ষার্থীরা তাদের হৃদয়ের গহীনে এই বিশ্বাস লালন করেন যে, অর্থ-সম্পদ, যশ-খ্যাতি এবং ভোগ ও প্রাচুর্যের মধ্যে কোন কামিয়াবী ও সফলতা নেই বরং সততা ও ন্যায়নীতি এবং বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীর ভিত্তিতেই জীবনে সফলতার সৌধ নির্মিত হয়। তাই দেশ ও জাতির আমানতের খেয়ানত, দুর্নীতি ও ইয়াবা কেলেঙ্কারীর দায় থেকে কওমী শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। ন্যায় ও ইনসাফের কষ্টিপাথরে যাচাই করলে দেখা যাবে প্রতিটি কওমী মাদরাসা দ্বীন ও ইসলামের এক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ, স্বাধীনতার স্বপক্ষে সৈনিক তৈরীর আদর্শ প্রতিষ্ঠান এবং দেশ প্রেমিক সুনাগরিক সৃষ্টির নির্মল ঝর্ণাধারা। এখানে বিরাজ করে পারস্পরিক কলহ-বিবাদমুক্ত এক অন্তরঙ্গ পরিবেশ। দূষিত রাজনীতির পঙ্কিলতা এবং ছাত্র রাজনীতির বিষাক্ততা এখানে নেই। তাই আজ পর্যন্ত কওমী মাদরাসায় পড়তে এসে সহপাঠীর হাতে কাউকে খুন হতে হয়নি। আর রাজনৈতিক কোন ইস্যুর কারণে প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়ে কাউকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়নি। পক্ষান্তরে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোকে এ ঘটনাগুলো অহরহ ঘটছে, যার প্রমাণ বহন করে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন।
পরিশেষে আমরা বলবো, কওমী মাদরাসাই হচ্ছে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে মানবীয় গুণাবলী শিক্ষা দেওয়া হয়। আর এ শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কওমী শিক্ষার্থীরা ভদ্রতা-নম্রতা, আত্মত্যাগ ও পরকল্যাণ ইত্যাদির মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষের হৃদয় জয় করে নেয়। সুতরাং যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার নামে অশিক্ষা ও কুশিক্ষা দেয়া হয় এবং শিক্ষার আলো ছড়ানোর পরিবর্তে অন্ধকার ছড়ানো হয় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের প্রিয় সন্তানদের পাঠানো বিরত রাখি এবং তাদেরকে কওমী শিক্ষায় শিক্ষিত করে নববী দীক্ষায় দীক্ষিত করে দেশ ও জাতির জন্য আলোকিত মানুষ গড়ে তুলি।

– সংকলনে: আনছারুল হক ইমরান

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বিধিনিষেধ আরও বাড়বে কি না জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

নূর নিউজ

আগামী বুধবার জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করবে বিএনপি

আলাউদ্দিন

সারাদেশে দ্রুত ফাইভ-জি চালুর নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নূর নিউজ