আবু তাহের, নিউইয়র্ক প্রতিনিধি:
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর, দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক, সাইয়্যদি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর অন্যতম খলিফা, প্রবীণ আলেম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা, খতমে কুরআন এবং দুআ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ২০শে সেপ্টেম্বর শনিবার বাদ মাগরিব মাদানী একাডেমী অফ নিউইয়র্ক আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাওলানা মুহিব্বুর রহমান। দারুল উলূম নিউইয়র্কের মুহাদ্দিস মাওলানা আজিজুর রহমান ঘোগারকুলীর সাবলীল উপস্থাপনায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাহফিলে কুরআনুল কারীম থেকে তিলাওয়াত করেন আন-নূর কালচারাল সেন্টার নিউইয়র্কের উস্তায মুফতী আবু তাহের সিদ্দিকী।
টেলিকনফারেন্সে প্রধান মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রেসিডেন্ট আল্লামা শায়খ আরশাদ মাদানী। তিনি বলেন, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর হৃদয়বিদারক ইন্তেকালের সংবাদে আমরা মর্মামত। তিনি শায়খুল ইসলাম মাদানী রহ. যোগ্য শাগরেদ ও খলিফা ছিলেন। মাদানী পরিবারের সাথে তাঁর সম্পর্ক, হৃদ্যতা ও ভালোবাসা ছিল পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময়ের। আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বারা দ্বীনের অনেক বড় বড় খেদমত নিয়েছেন।
মাওলানা আরশাদ মাদানী আরো বলেন, বাংলাদেশে তাঁর ছাত্র, ভক্ত অনুরক্তের সংখ্যা অগণিত। ১৯৪৬ সনে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হয়ে তিনি তাঁর গোটা জীবন ইসলামের প্রচার -প্রসার, দারস-তাদরিস, হাদিস, ফিকহ, বাইয়াত, সুলুক, ইসলাহ ও তাজকিয়ার জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাক ও ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, শিক্ষা ও সমাজ গঠনে যোগ্য নেতৃত্বের আসন অলংকৃত করেন। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে কখনো তিনি তাঁর আদর্শ ও মিশন থেকে পশ্চাদপসরণ করেননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও তিনি মসনদে হাদিসে বুখারী শরীফের দরস দিয়েছেন।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, বাংলা ও উর্দুতে একাধিক গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন দেশ ও জাতির কল্যাণে সদা নিবেদিত একজন আলেমে দ্বীন। ইখলাস, লিল্লাহিয়্যাত ও সাদাসিধে জীবন যাপন ছিল তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট্য। তার ইন্তেকাল নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বিরাট বেদনাদায়ক ও শোকের। তবে আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা আমাদের সবার থেকে উর্ধ্বে। তাঁর ফায়সালার উপর সকলের ধৈর্য্য ধারণ করা আবশ্যক। এ জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কারের অঙ্গীকার রয়েছে।
দু’আ মাহফিলে বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দারুল উলূম নিউইয়র্কের শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুর রহীম, আল মানসুর কালচারাল সেন্টার নিউইয়র্কের প্রধান মুফতী মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।
আরো বক্তব্য রাখেন দারুল উলূম নিউইয়র্কের সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা ইয়ামীন হোসাইন,জামিয়া ইসলামিক সেন্টার মসজিদ অফ উডহ্যাভেনের ইমাম ও খতীব মাওলানা শায়খ আসআ’দ আহমদ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের জামেয়া কুরআনিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম, ইউনাইটেড ইমাম উলামা কাউন্সিলের সভাপতি মাওলানা রফিক আহমাদ রেফাঈ, আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের সভাপতি হাফেজ রফিকুল ইসলাম, ইমাম ও খতীব মাওলানা আতাউর রহমান জালালবাদী, দারুস সালাম মসজিদ ইমাম ও খতীব মাওলানা আবদুল মুকিত, আস সাফা ইসলামিক সেন্টারের জেনারেল সেক্রেটারী মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, দারুল কুরআন ও সুন্নাহ’র মুহাদ্দিস মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী, নিউইয়র্ক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা রশিদ আহমদ, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের জামেয়া কুরআনিয়া মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আহমদ আবু সুফিয়ান, লেখক ও গবেষক রশীদ জামীল, বায়তুল হামদ-এর পরিচালক মাওলানা আনাস জামালী, আল ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবদুল হালিম ও মাদানী একাডেমী অফ নিউইয়র্কের সাবেক সেক্রেটারী মাওলানা শাহেদ আহমদ প্রমুখ।
এছাড়াও দুআ মাহফিলে আরো অনেক উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মুসল্লী অংশ নেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-এর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দু’আ পরিচালনা করেন শায়খুল হাদীস মাওলানা আবদুর রহীম।
মাহফিলের পর এক বৈঠকে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শফী রহ-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।