ইমরান খান সরকারের পতন ঘটাতে একজোট হয়েছে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এরই মধ্যে গত সোমবার সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ প্রধান মুশতাক আহমেদ মাহারকে অপহরণের ঘটনায় পাকিস্তানে গভীর রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।
দেশটির আধাসামরিক বাহিনী ‘রেঞ্জার্স’ সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে অপহরণ করে বিরোধী দলীয় নেতা সাফদার আওয়ানকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দুনিয়া টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিযোগ করেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির মুখপাত্র।
সেনা সমর্থিত ইমরান খান সরকার যদিও এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই অপহরণের ঘটনার পরই গত সোমবার সাফদার আওয়ানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। করাচিতে জাতির পিতা জিন্নাহর সমাধিতে যাওয়ার সময় রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি সিন্ধু হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
সাফদার আওয়ান তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের স্বামী। ইমরান খানের সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সাফদার আওয়ানের পর বেশ কিছু সাংবাদিক এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেনাবাহিনী এবং সরকারের সমালোচনা করায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।
অপহরণের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ বাহিনী। প্রতিবাদে প্রদেশটির প্রায় সব শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ছুটির আবেদন করেছেন। এ ঘটনার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে, যা ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর গত দুই বছরের মধ্যে পাকিস্তানে সব থেকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের ১১টি শীর্ষ রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে খাদ্য ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি ও সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সেনা ও রাজ্য সরকারের নির্দেশিত পৃথক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ স্বরুপ ছুটির আবেদন ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিন্ধ প্রদেশের পুলিশ প্রধান মাহার। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে টুইটারে পোস্ট করে এ তথ্য জানায় সিন্ধ পুলিশ।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রায় অর্ধেক সময় পাকিস্তানকে সরাসরি শাসন করেছে সেনাবাহিনী। বিশেষ করে পররাষ্ট্র ও জাতীয় সুরক্ষা নীতিতে বরাবরই হস্তক্ষেপ ছিল সামরিক বাহিনীর। বর্তমান ইমরান খান সরকারের আমলে এর ভূমিকা আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের সংবিধানের অনুযায়ী সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করারও সুযোগ নেই।