ব্যাপক প্রতিবাদ ও আলোচনা-সমালচনার পর ঢাকার তেজগাঁও আড়ং শোরুমে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন ইমরান হোসাইন লিমন। মুখে দাড়ি থাকায় চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর হস্ত ও কারুশিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আড়ং (ব্র্যাক) কর্তৃপক্ষ তাকে এই প্রস্তাব দেন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) গণমাধ্যমে লিখিত দুঃখ প্রকাশের পর লিমনকে চাকরির প্রস্তাব দেয় আড়ং। প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া সেলের পাবলিক রিলেশন অফিসার রেদওয়ান আহমদ গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ওই তরুণকে ফোন করে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি চাইলে তেজগাঁও শোরুমে চাকরি করতে পারবেন।
আড়ংয়ের চাকরির নীতিমালায় দাড়িবিষয়ক কোনো নেতিবাচক শর্ত নেই উল্লেখ করে রেদওয়ান আহমদ বলেন, সেদিন ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। প্রয়োজনে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি সোমবার (১৫ মার্চ) একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন। সেই বিবৃতিতে ওই ঘটনার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন তারা। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
লিমনকে চাকরি না দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সিলেট নগরীর জেল রোডস্থ আড়ং শোরুমের সামনে সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১টায় ‘সিলেটের সচেতন আলেম সমাজ’র ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে সিলেটের কয়েক’শ আলেম, শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন।
এই আন্দোলনের পরেই প্রতিষ্ঠানটির টনক নড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাকে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই আন্দোলনের অনেক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
দাঁড়ি থাকায় ঢাকার তেজগাঁও আড়ংয়ের একটি শোরুমে চাকরি দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার (১২ মার্চ) ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন ইমরান হোসাইন লিমন নামের এক তরুণ। ৮ মিনিটের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরবর্তীতে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ভিডিওতে লিমন বলেন- ‘সম্প্রতি আমি আড়ং, সেইলর, জেন্টেল পার্কসহ বেশ কয়েকটি শোরুমে সেলসম্যান পদের জন্য সিভি ড্রপ করি। শুক্রবার আমাকে আড়ংয়ের ইন্টারভিউর জন্য তেজগাঁওয়ে ডাকা হয়। ইন্টারভিউর সময় আমি মাস্ক পরা ছিলাম। সেখানে যারা ছিলেন, আমি তাদের সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিয়েছি। ইন্টারভিউর শেষপর্যায়ে তাদের কথা ও ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে তারা আমাকে নিয়ে নেবেন, তারা আমার কথায় সন্তুষ্ট।
কিন্তু কথা শেষ করে চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে দাঁড়াতে বলেন। তারা হয়তো আমার মাস্কের পাশ দিয়ে গালে দাড়ি দেখতে পান। আমাকে তারা বললেন, ‘মাস্কটা খুলো।’ আমি মাস্ক খুলতেই তারা বললেন, ‘উই আর ট্রুলি স্যরি (আমরা সত্যিই দুঃখিত)।’ আমি বললাম, ‘কেন, কী হয়েছে?’ উনারা বললেন, ‘আপনাকে আমরা কনফার্ম করতে পারছি না। আপনি যদি দাড়িটা ক্লিন শেভ করতে পারেন তাহলে আপনার জবটা আমরা এখানে কনফার্ম করলাম ইনশাআল্লাহ।’
লিমন বলেন, আড়ংয়ের লোকজন আমাকে বলেন, ‘আমাদের আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে সেলসম্যানের জব করতে হলে আপনাকে ক্লিন শেভ করতে হবে।’ তাদের এ কথা শুনে আমি হতভম্ব। আমি ফিরে আসার সময় আমি তাদেরকে বলি, তাহলে আমি এই জবটা করব না। আমি এ কথা বলে চলে আসছিলাম। তবে আমি আবারও তাদের কাছে ফিরে যাই। তাদেরকে বলি যে, আমি খুবই নিডি (অভাবগ্রস্ত)। আমাকে কি কোনোভাবে চাকরিটা দেয়া যায়? তারা বলে, ‘না এটা আড়ংয়ের রুলসে নাই।’
এরপর সর্বশেষ মঙ্গলবার তেজগাঁও শোরুমে লিমনকে চাকরি করার অফার দেন আড়ং কর্তৃপক্ষ।