সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:  সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলে সুপেয় পানির জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার। বৈশাখের তাপে শুকিয়ে গেছে পুকুর, নলকূপ থেকে বের হচ্ছে নোনাপানি। এমন অবস্থায় এক কলসি পানির জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে গ্রামবাসীকে। সাতক্ষীরা-৪ আস‌নের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলছেন, পানির সংকট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

শ্যামনগরের কৈখালী ইউনিয়নের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পানি আনতে তাদের যেতে হয় জয়াখালী মোড়ের আকিজ কোম্পানির কারখানার পানির প্ল্যান্টে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জোটে এক কলসি পানি।

ওই ইউনিয়নের মনির হোসেন বলেন, জয়াখালী গ্রামে যেসব পুকুর আছে, গরমে সবই শুকিয়ে গেছে। একটি মাত্র পুকুরে কিছু পানি আছে, যা আবার লিজ নেয়া হয়েছে মাছ চাষের জন্য। এ কারণে পানিসংকট এখন তীব্র।

ওই এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, ‘এক কলসি পানির জন্যি তিন-চার ঘণ্টা প্রচণ্ড রোদের মধ্যি লাইনি দাঁড়ায়ছি। ৩/৪ কিলোমিটার দূর থেকে গিয়ে আকিজ কোম্পানির পানির ফিল্টার থেকে পানি নিচ্ছি। কিন্তু ফিল্টারে যে পানি আছে তা দুই-এক-দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তারপর যে কী হবে তা কেউ জানে না।’

পানির এমন সংকট রমজাননগর, ঈশ্বরীপুর, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ গোটা উপকূলেই। শ্যামনগর সদরের আজিজুর রহমান, বুড়িগোয়ালিনীর আব্দুল হালিম, মুন্সিগঞ্জের বেলাল হোসেন, পিযুষ বাউয়ালিয়াসহ অনেকেই তা জানিয়েছেন।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা লিডার্স উপকূলের পানির সংকট নিরসনে কাজ করছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার বিশ্বাস জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানির জন্য এসব এলাকায় হাহাকার চলছে।

তিনি আরও জানান, এখানকার মানুষ নিরাপদ খাবার পানির দাবিতে সম্প্রতি কয়েক দফা মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশও করেছে।

স্থানীয় কলেজশিক্ষক দেবদাস সরকার জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপকূলের বেড়িবাঁধ ভেঙে সব জায়গায় নোনাপানি ঢুকে পড়েছিল। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে গিয়েছিল। সবচেয়ে ক্ষতি হয় এই এলাকার একমাত্র পানির উৎস, পুকুরগুলো।

তিনি বলেন, লিডার্স এখানে পানির ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তারাও দুদিন ধরে পানি দিতে পারছে না। তাই সংকট এখন তীব্র। এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে পানির ব্যবস্থা না করলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

সাতক্ষীরা-৪ আস‌নের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার আশ্বাস দিয়েছেন সংকট সমাধানের। তিনি বলেন, ‘বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় খাবার পানির সংকট নিরসনে সেখানে একটি পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেটি শিগগিরি চালু হবে। অন্যান্য জায়গায় সুপেয় পানির সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’

তিনি জানান, উপকূলের ইউনিয়নগুলোতে সুপেয় পানির এই সংকট নিরসনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৬০টি পুকুর খনন, গভীর নলকূপ স্থাপন ও আরও কিছু প্রকল্প। জগলুল হায়দার বলছেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে উপকূলের পানির চাহিদা মেটানো যাবে অনায়াসে।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বীকৃতি বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে

নূর নিউজ

নোয়াখালীতে ইমামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নূর নিউজ

নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখুন: পীর সাহেব চরমোনাই

নূর নিউজ