কঠোর লকডাউনের মধ্যেও বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়ক ও মহাসড়কে গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় সড়কে ছিল রিকশা, মোটরবাইক ও ব্যক্তিগত গাড়ির রাজত্ব। শিল্পকলকারখানা খোলার সুযোগে বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও খোলা হচ্ছে। এ কারণে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত বেড়েছে। এছাড়া প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দোকানপাট খুলছে। এসব ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও তেমন লক্ষ করা যায়নি। অনেক চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নানা প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরবাইক, রিকশা, বাইসাইকেলে চড়ে মানুষ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছে। হেঁটে যাওয়া ও রিকশায় চড়ে চলাচলকারী মানুষদের কম জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরবাইকে চলাচলকারীদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যারা জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত নন এবং বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। সর্বত্রই আলোচনা চলছে- ‘কঠোর লকডাউন আর কঠোর নেই।’
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি ও লকাডাউনের নির্দেশনা অমান্য করে চলাচল করায় ৩৮৫ জনকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেফতার করেছে। আর মোবাইল কোর্টে ১২৬ জনকে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৫০৮টি গাড়িকে ১২ হাজার ২৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখ বছিলার শহিদ বুদ্ধিজীবী সেতু এলাকা দিয়ে প্রচুর গাড়ি শহরের ভেতরে ঢুকছে। এ প্রবেশমুখে রয়েছে চেকপোস্ট। গাড়ি চেকিং করার সুবিধার্থে ওই প্রবেশমুখের সড়কটি সরু করে রাখা হয়। যৌক্তিক কারণ পেলে পুলিশ গাড়ি ছেড়ে দেয়। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে যাত্রীদের ফেরত পাঠানো হয়। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, প্রেস ক্লাব, মতিঝিল, পুরান ঢাকা, উত্তরা, কুড়িল, মিরপুর, বিজয় সরণি, প্রগতি সরণিতে প্রচুর গাড়ি লক্ষ করা গেছে। আর ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা যায়। ট্রাফিক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলে তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখান। অন্য দিনের তুলনায় নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ি, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে বলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান। এ কারণে সকাল থেকে অনেক গাড়িকে সিগন্যালেও আটকে থাকতে হচ্ছে।
বিজয় সরণিতে পুলিশ সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ির প্রচণ্ড চাপ বেড়েছে। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে অনেকে যাত্রী পরিবহণ করছে। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহণ অনেক বেড়েছে। বিধি অমান্য করায় তিনজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল চালককে ১ হাজার টাকা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালককে ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাত্রী পরিবহণ করার পাশাপাশি তারা মিথ্যা তথ্যও দিয়েছিলেন। তারা আরও জানান, রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘর থেকে হওয়া অধিকাংশ মানুষকেই তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছেন না। বিধিনিষেধ মানতে অনেকেই অপারগতা দেখাচ্ছেন।
তেজগাঁও এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গাড়ির চাপ বেড়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত অফিসগামী গাড়ির চাপ বেশি ছিল। সিগন্যালে এক থেকে দুই মিনিট পর্যন্ত গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি এবং জাহাঙ্গীর গেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সড়কে মানুষ অন্যদিনের তুলনায় বেশি বের হলেও তল্লাশি কার্যক্রম চলছে ঢিলেঢালাভাবে। মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ স্থানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। মূলত সড়কসহ অলিগলিতে মানুষের চলাচল বেড়েছে। আর মহল্লার আনাচে-কানাচে আড্ডায় মেতেছে নগরবাসী। দোকানপাট, মার্কেট, শোরুম সবই চলছে। কিন্তু কোথাও বিধিনিষেধ মানতে দেখা যায়নি।
মিরপুর ১, ২, ১০, ১১, ১২ শাহআলী, দারুস সালাম, বর্ধন বাড়ি, গোলারটেক, দ্বীপনগর, বড়বাজার, সবুজ বাংলা, পলাশনগর, ইব্রাহিমপুর ঘুরে একই চিত্র দেখা গছে।
মিরপুর-১ নম্বরে মিরপুর টাওয়ার, আহমেদ ভবন, সংগীত মার্কেট, গার্মেন্ট সরঞ্জামাদির মার্কেট, খলিল ভবন, শাহআলী মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান খোলা হয়। মার্কেটের প্রবেশপথের শাটার অর্ধেক নামিয়ে চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন পাইকারি পণ্যের ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেনাকাটা করছে। মার্কেটগুলোর প্রবেশপথে কিংবা অভ্যন্তরে জীবাণুনাশক স্প্রে রাখা হয়নি। বেচাকেনা না থাকলে দোকানিরা নিজেদের মধ্যে গাাদাগাদি করে আড্ডা দিয়েছে।