দারুল উলুম নিউ ইয়র্কের ফারেগীনের মাথায় পাগড়ি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নিউইয়র্কের বার্ষিক হিফজ ও আলিম গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। জ্যামাইকার পারসন্স বুলেবার্ডে অবস্থিত দারুল উলুমের ক্যাম্পাসে শনিবার বেলা ১১টায় এই অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দারুল উলুম নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট বরকত উল্লাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি, স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দারুল উলুম পরিচালনা পরিষদের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় মুসল্লিরা যোগ দেন।

অতিথি ইমাম সিরাজ ওয়াহহাজ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। একই সাথে তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের প্রতি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সন্তানের আজকের অর্জনের পেছনে জড়িয়ে আছে পিতা-মাতার অনেক শ্রম।

দারুল উলুম নিউইয়র্ক থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আলিম ও হাফেজ হচ্ছেন। গত দুই শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠানটি থেকে মোট আলিম, আলিমা ও হাফেজ হয়েছেন ৮৩ জন। ২০২১ শিক্ষাবর্ষে ২৬ জন আলিম ও আলিমাহ হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জন ছেলে ও ৭ জন মেয়ে। এ ছাড়া হাফেজ হয়েছেন মোট ১০ জন। তাদের মধ্যে ছেলে আটজন ও মেয়ে দুজন। পাশাপাশি ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠানটি থেকে মোট ২৭ জন আলিম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন ছেলে ও ১৩ জন মেয়ে।

এ ছাড়া ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ১৮ জন হাফেজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ছেলে এবং ৭ জন মেয়ে। করোনা ও লকডাউনের কারণে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে পাস করা শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করতে পারেনি দারুল উলুম কর্তৃপক্ষ। এবার বিগত দুই বছরে যারা পাস করেছেন, দারুল উলুমের পক্ষ থেকে তাদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

 

গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস-আনন্দ। এই আনন্দে কোনো কোনো ছাত্র-শিক্ষককে কাঁদতেও দেখা গেছে। গ্র্যাজুয়েশন করা সন্তানদের অভিভাবকেরাও ছিলেন উৎফুল্ল। এ ছাড়া ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন ক্লাসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ছাত্রছাত্রীদেরও উৎসাহ দিতে পুরস্কৃত করা হয়।

 

২০২১ সেশনে আলিমা বিভাগে ৭ জন গ্র্যাজুয়েশনকারীরা হলেন সৈয়দ আফরিন, আয়েশা সিদ্দিকা, আবীর রেহমান, সাদিয়া হাসান, হুমায়রা আলম, সামিরা আলম ও মদিনা বাবুরি। আলিম বিভাগে ১৯ জন যারা পাস করেছেন তারা হলেন আব্দুল আল মাসুদ, ফাহাদ তারমিজি, হামদান এ ইসলাম, হামজা এ কায়ানী, ইবনে মোয়াজ হোসেন, কাহিস আহমেদ, খুরাম আলী, মারওয়ান ইসলাম, মোহাম্মদ সাকির, মোহাম্মদ সোলেহ, মোহাম্মেদ আশরাফুল ইসলাম, রুহুল আমিন রাফিন, সাকিব আমিন, শাহ এহসানুল ইসলাম, শিহাবুদ্দীন আহমেদ ফরহাদ, সোহায়েব সাফদার আলী, উমাইর উদ্দিন খান, ওয়াকার আহমেদ ও জাবেদ হোসেন জামান।

 

২০২১ সেশনে হাফিজ বিভাগে ৮ জন গ্র্যাজুয়েশনকারীরা হলেন হাফিজ এহসান উদ্দিন, আরিয়ান হুসেইন, তাহমিদ ইসলাম, আবু সিফাত, আব্দুল্লাহ হোসেন, ইফাত হোসেন, সাঈদ খান ও আব্দুল রহমান।

 

মসজিদ বুখারির হাফিজ ২০২১ সালে ২ জন হাফিজ মোহাম্মেদ সাদ এবং হাফিজ মো. রাফি। মেয়ে বিভাগে ২০২১ সালে ২ জন হাফিজ হলেন সুমাইয়া তিরমিজি ও নাজিয়া নাহিয়ান। ২০২০ সেশনে মোট ২৭ জন পাস করেন। এরমধ্যে আলিমা বিভাগে ১৩ জন গ্র্যাজুয়েশনকারীরা হলেন সায়মা সুলতানা, মায়মুনা হান্নান, মাহবুবা সোমা, তাসফিয়া আলম, সাফা হাদী, মেহবেশ শওকত, মাহাম মুস্তাক, আসিয়া আলী, ফাতিমা ফায়জুর রহমান, ফারজানা ওয়াহাব, সাদিকা রহমান, আয়েশা নাঈম ও নেহা আনিস।

 

১৪ জন আলিমরা হলেন কাজী ওয়ালিউল্লাহ ফাওয়াজ, মোহাম্মেদ ইমাদুদ্দিন আহমেদ, ইব্রাহিম জুনায়েদ, তাহমিদ হুসাইন, আব্দুল্লাহ জাহাইর আলম, মোমিন শাহজাদ, মাজ প্যাটেল, সোয়েব সিদ্দিকী, ইউসুফ আহমেদ, মোশারেফ হোসেন, মোহাম্মেদ হাফিজুর রহমান, শিবতাটাল্লাহ আহমেদ, তোফাজ্জুল হক আমিন ও সালিম আহমেদ।

 

২০২০ সেশনে হাফিজ বিভাগে ৯ জন হলেন গ্র্যাজুয়েশনকারীরা হলেন সাকিব তানভির, সামিত আলম, জহিরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন মো. কাফিল ও সায়েব সুদাদ।

 

মসজিদ বুখারির ২ জন হাফিজ মাউজ আন্ধ ও হাফিজ হুজাইফা শওকত। মেয়েদের বিভাগে ৭ জন হাফিজারা হলেন হাফিজ হাবিবা আরিফ, আমিনা খান, সুবাইটা হোসেইন, ফাতিমা আলমগীর, আকিলা নুজহাত, আসিয়া এহসান ও তাসনুম ইসলাম।

 

দারুল উলুম নিউইয়র্কের প্রেসিডেন্ট বরকত উল্লাহ বলেন, আল্লাহর রহমতে আমরা খুশি। করোনার মধ্যেও ছাত্রছাত্রীরা ধৈর্য ও মনোযোগসহ লেখাপড়া করছেন ও পাস করছেন। আমাদের এখানে ছেলেদের থাকার ব্যবস্থা আছে, তবে মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা নেই। ছেলে শিক্ষার্থীরা নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন এবং এখানে থেকে পড়াশোনা করেন।

 

তিনি জানান, করোনার পর থেকে রমজান মাসের আগ পর্যন্ত তারা অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতেন। রমজান মাস থেকে তারা ইনপারসন ক্লাস খুলে দেন। বর্তমানে তাদের ইনপারসন ক্লাস চালু রয়েছে। তিনি আরও জানান, এবার যারা পাস করেছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষা গ্রহণে মিসরে যাচ্ছেন। কয়েকজন যাচ্ছেন সৌদি আরবে। এ ছাড়া নিউইয়র্কের কলেজে যাচ্ছেন কয়েকজন। মুফতি হিসেবেও যোগ দেবেন কয়েকজন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ বছর কয়েকজন মুফতি হয়েছেন।

 

জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দারুল উলুম নিউইয়র্কে ব্যালেচর কোর্স চালু হতে যাচ্ছে। এখানকার একটি কলেজের সাথে তারা এই কোর্স চালু করছে। অ্যাকাউন্টিংসহ মোট তিন-চারটি বিষয়ে এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন এবং চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারবেন। আগে এই কোর্স ছিল না বলে এখান থেকে পাস করার পর শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য নিউইয়র্কের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতেন।

 

দারুল উলুম নিউইয়র্কে আলেম পাস করতে সময় লাগে সাত বছর। আর হাফেজি পড়তে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ বছর। মুফতি পড়ার জন্য সময় লাগে দুই বছর। সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবছর নতুন সেশন শুরু হয়। হাফেজি পড়ার জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে চতুর্থ গ্রেড থেকে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে পঞ্চম গ্রেড থেকে ভর্তি নেওয়া হয়। এ ছাড়া আলেম পড়ার জন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে ষষ্ঠ গ্রেড থেকে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে অষ্টম গ্রেড থেকে ভর্তি নেওয়া হয়। এখানে বছর ধরা হয় ১০ মাসে। প্রতি মাসে বেতন হিসেবে খরচ হয় ৩৮০ ডলার। আর বছরে খরচ হয় ৩ হাজার ৮০০ ডলার।

 

এদিকে এক বিবৃতিতে অনুষ্ঠানটি সফল করার জন্য প্রেসিডেন্ট বরকত উল্লাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অতিথি, অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

হজযাত্রীরা মক্কায় গিয়ে প্রথমে যা করবেন

নূর নিউজ

কুরবানির প্রস্তুতি নিন

নূর নিউজ

দ্বিনের জন্য নারী মুহাদ্দিসের অসামান্য আত্মত্যাগ

নূর নিউজ