হোয়াইট হাউজের সামনে সুরক্ষার দাবিতে সংখ্যালঘুদের ৩২টি সংগঠনের বিক্ষোভ

বাংলাদেশে সম্প্রতি দুর্গোৎসবের সময় হয়ে যাওয়া সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান সহ বেশ কিছু দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ করেছে।

প্রভু নিত্যানন্দ কিশোর দাসের নেতৃত্বে এবং ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির ৩২টি সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেনী-পেশার প্রায় হাজারখানেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা নানা রকম ব্যানার পোস্টারসহ দায়ীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়া নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ১০টি বাসে করে ওয়াশিংটন ডিসি’তে আসেন।

বিক্ষোভের কারণ জানাতে গিয়ে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ পূজা সমিতির সাবেক সভাপতি বিষ্ণু গোপ বলেন, “বাংলাদেশে সব সময়ই পদ্ধতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে। তবে দোষীদের এখন পর্যন্ত কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আমরা চাই যাদের এখন ধরা হয়েছে এবং প্রকৃত আসামিদের বিশেষ আইনে শাস্তির আওতায় আনা হোক। আর আমরা যে বিচার চাই সেটা সবাইকে জানিয়ে জনমত তৈরী করতেই হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ করছি”।

ওয়াশিংটন ডিসি’র হিন্দুদের সংগঠন নীলাচলের সভাপতি প্রানেশ হালদার বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করতে পারার কথা। আমরা বাংলাদেশের অংশ। আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বাংলাদেশ আমাদেরও দেশ। অন্যদের মত আমাদেরও অধিকার থাকা উচিৎ। সুতরাং সংখ্যালঘু হিসেবে হিন্দুদের অধিকার নিশ্চিত করা উচিৎ। এর জন্য যদি আইন বা কোন ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন হয়, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য আমরা তাই চাই”।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের হোয়াইট হাউজের সামনে নানা রকম ব্যানার পোস্টার হাতে বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। নভেম্বর ১৯, ২০২১।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের হোয়াইট হাউজের সামনে নানা রকম ব্যানার পোস্টার হাতে বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। নভেম্বর ১৯, ২০২১।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ইউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি রনবীর বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন যে ভয়াবহ রূপ ধারন করছে, তা থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার যেন একটি আইন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সহিংসতা চলছে, তা যেন বন্ধ করা হয়। যেমন, রাঙ্গুনিয়ার জ্ঞানেস্মরণ মহাবিহার লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়েছে এবং টেকনাফে একটি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে– তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ডিজিটাল আইনের নাম দিয়ে যেসব বৌদ্ধ ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের যেন অবিলম্বে ছেড়ে দেয়া হয়”।

হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ ছাড়াও ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, ভারতীয় দূতাবাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাসে দেয়া স্মারকলিপিতে তারা ৮টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। সাম্প্রতিক দুর্গোৎসবে সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার ও নির্যাতিতদের পুনর্বাসনসহ ঐ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে– হেইট ও স্পীচ ক্রাইম আইন পাশ করে এর আওতায় অবিলম্বে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং জজ সাহাবুদ্দিন কমিশন প্রদত্ত তালিকায় চিহ্নিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার শুরু; নতুন বিচার বিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত সংখ্যালগঘু নির্যাতনের সকল ঘটনার শ্বেতপত্র তৈরী করা; ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল করে বাংলাদেশকে আবার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিনত করা; সংখ্যালঘু মন্ত্রনালয়, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মানবাধিকার কমিশন গঠন করা; সংখ্যালঘুদের কল্যাণমূলক কাজের স্বার্থে আইনের মাধ্যমে হিন্দু-বৌদ্ধ খৃস্টান ফাউন্ডেশন গঠন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।

এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র নেতা ও মানবাধিকার কর্মী সীতাংশু গুহু জানান, “আমাদের এই প্রতিবাদের একটাই উদ্দেশ্য। আর তা হলে বাংলাদেশ সরকারকে বলা, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত ঘটনা ঘটলে আপনারা বলবেন যে, সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছে। ২০১২ সালের রামুর ঘটনা থেকে আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। বিচার দ্রুত হওয়া উচিত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিৎ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকলেও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি হচ্ছে না। এখান থেকে আমরা বার্তা দিতে চাই- প্রতিবাদ চলছে, চলবে, যতদিন না আপনারা সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছেন”। আরও দেরি হবার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদক্ষেপ নেবার আহবান জানান ইউনাইটেড হিন্দুস অফ ইউএসএ’র নেতা সীতাংশু গুহু। এসময় তার পাশে ছিলেন প্রভু নিত্যানন্দ কিশোর দাস।

স্মরণ করা যেতে পারে, এ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পণ সংঘের পূজামণ্ডপে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং হামলা ও ভাংচুর চালানো হয় বাংলাদেশের অন্তত আটটি মন্দিরে। মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনার জেরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয় এবং পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত চার জন। এর পরের কয়েক দিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, রংপুর, ও কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ও উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীতে নিহত হন দুই জন। পরে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজা মণ্ডপের ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত শতাধিক মামলা হয়েছে এবং সাত শতাধিক লোক গ্রেফতার হয়েছেন।

 

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মুসলিমদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘আলফাফা’

নূর নিউজ

প্রবাসীদের দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আওয়ামী লীগের স্মারকলিপি ও গণঅনশন কর্মসূচি পালন

আনসারুল হক

কাতারে আওয়ামী লীগের মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

নূর নিউজ