হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে পাগড়ী পেলেন আড়াই হাজার তরুণ আলেম

এশিয়ার অন্যতম ও প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে গত শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) উত্তীর্ণ প্রায় ২৫০০ তরুণ আলেমকে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মনোগ্রাম খচিত বিশেষ সম্মানসূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়েছে।

আজ (৭ জানুয়ারী) শুক্রবার লক্ষাধিক মুসল্লীর অংশগ্রহণে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন ।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেছেন, বর্তমানে ঈমান, আমল ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে সাধারণ শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে গাফলতি দেখা যাচ্ছে। ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়ার কারণেই মুসলমানগণ নানা দুর্দশা ও ঘাতপ্রতিঘাতের শিকার হচ্ছে। সঠিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই কেবল এই বিপদাপদ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর সাহায্য আশা করা যায়।

তিনি বলেন, ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, ইনসাফ, সততা ও সহাবস্থানের ধর্ম। পরিপূর্ণরূপে ইসলাম মেনে চললে আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের সাথে সাথে দুনিয়াবী জীবনও শান্তি এবং সমৃদ্ধিময় হবে। এ জন্য সবার আগে আমাদের ঈমান- আক্বিদা বস্তুনিষ্ঠ ও দৃঢ় করতে হবে। তারপর যথারীতি নামায কায়েম এবং এরপর রোযা,
হজ, যাকাত’সহ অন্যান্য বিধানসমূহ মেনে চলতে হবে। সুন্নাত অনুযায়ী জীবন সাজাতে হবে। যেনা-ব্যভিচার, মিথ্যা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যের হক আত্মসাত, মারামারি-হানাহানি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে হবে।

আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আরো বলেন, ইসলামে অসত্য, অন্যায়, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের কোন স্থান নেই। ইসলাম ন্যায় ও শান্তির ধর্ম। ইসলামকে অনুসরণ করতে পারলে এদেশে কোন হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকবে না এবং শান্তি ও ইনসাফ নিশ্চিত হবে।

দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মুঈনে মুহতামিম আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আনোয়ার শাহ আযহারী ও ড. মাওলানা নূরুল আবছার আযহারীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রেখেছেন, বাবুনগর মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ, প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আব্দুল হালীম বুখারী, নানুপুর উবায়দিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, বি-বাড়িয়া দারুল আরকাম মাদসার মুহতামিম মাওলানা সাজেদুর, পটিয়া মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি আহমাদুল্লাহ, সিরাজগঞ্জ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল বাসেত খান সিরাজী, দারুল মাআরিফ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সুলতান যাওক্ব নদভী, নাজিরহাট বড় মাদরাসার মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, মেখল
হামিউচ্ছুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা উসমান ফয়জী, মুজাহেরুল উলূম মাদরাসা মুহতামিম মাওলানা লোকমান, রাঙ্গুনিয়া দারুল উলূম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সা’দাত, জিরি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা খুবাইব, ফতেহপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান, জিরি মাদরাসার মুহাদ্দিস ড. মাওলানা আফম খালেদ হোসেন, মেখল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ইসমাঈল খান, দারুল হেদায়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা ফোরকান আহমদ, সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হুমায়ুন কবীর, ড. মাওলানা নূরুল আবছার আল-আযহারী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বার্ষিক মাহফিলের পাশাপাশি দস্তারবন্দী সম্মেলন বা বিশেষ সমাবর্তনে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে গত শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) উত্তীর্ণ প্রায় ২৫০০ তরুণ আলেমকে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মনোগ্রাম খচিত বিশেষ সম্মানসূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়। তাদের মাথায় পাগড়ি তুলে দেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস আল্লামা নূর আহমদ, শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ, শায়খে সানী আল্লামা হাফেজ শোয়াইব, মুঈনে মুহতামিম আল্লামা
মুফতি জসিমুদ্দীন, শিক্ষা পরিচালক মাওলানা কবীর আহমদ, সহকারী শিক্ষা পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী, মুহাদ্দিস মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী প্রমুখ।

বিশেষ সমাবর্তনে পাগড়ি প্রদান শেষে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক আবেগঘন বক্তব্য রেখে বলেন, তোমরা সবার আগে নিজে ও পরিবারের সদস্যদেরকে পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারীরূপে গড়ে তুলবে এবং পাশাপাশি প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশবাসীর মাঝে ইসলামের শিক্ষা, আদর্শ, ইনসাফ ও শান্তির বাণী প্রচারের লক্ষ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।

হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার উলামায়ে কেরাম ছাড়াও লক্ষাধিক মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন। বাদ ফজর থেকেই বয়ান শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো মাহফিল কানায় কানায় পূর্ণ হযে যায়।

মাহফিলের দিন শুক্রবার প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে জুমার খুতবা প্রদান ও ইমামতি করেন আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন এবং জামে বায়তুল আতিকে জুমার খুতবা ও ইমামতি করেন মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।

বাদ জুমা হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া উপস্থিত লক্ষাধিক উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান করেন।

এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল উপলক্ষ্যে শিক্ষা ভবন, ছাত্রাবাস, বিশাল প্যান্ডেল এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কসহ সমগ্র হাটহাজারী এলাকা হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ ও তরুণ আলেমদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সেহরির সময় মাইকে অতিরিক্তি ডাকাডাকির প্রয়োজন নেই : শায়খ আহমাদুল্লাহ

নূর নিউজ

মাদ্রাসার খোলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে আলেমদের বৈঠক

নূর নিউজ

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বিশ্বসেরা হাফেজ তাকরীম

নূর নিউজ