মানুষের আস্থার স্থল কেবল একজনই। যার অফুরন্ত নেয়ামত অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। যিনি সবকিছুকে অস্তিত্বে এনেছেন। যিনি সবার পালনকর্তা। যার নৈকট্য অর্জন করতে পারাই মাখলুকের চূড়ান্ত সফলতা। যার থেকে দূরে সরে যাওয়া মানেই চরম ব্যর্থতা, হেরে যাওয়া। তিনি আর কেউ নন, বিশ্বজাহানের একমাত্র স্রষ্টা পরম ক্ষমতাধর মহান আল্লাহতায়ালা।
আরবিতে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘মান লাহুল মাওলা, ফালাহুল কুল।’ অর্থাৎ মালিক যার, সবকিছুই তার। এই মালিক হলেন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা। সুতরাং মালিকের হক হলো বান্দা তার ইবাদত করবে, গোলামি করবে। কেননা মাবুদ সর্বসময় আবেদের থেকে ইবাদত পাওয়ার অধিকার রাখে। অথচ মানুষ তার সব নিয়ামত উপভোগ করেও ভুলে যায় অকপটে। কিন্তু সেই মহান স্রষ্টা ভুলে যান না ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কোনো সৃষ্টিকেও।
আল্লাহ প্রেরিত পয়গম্বর হজরত নুহ (আ.) প্রবল ধৈর্যশক্তি নিয়ে সাড়ে নয়শ বছর তার জাতিকে প্রভুর একত্ববাদের দাওয়াত দেন। কিন্তু বৈষয়িক উন্নতি তাদের আত্মভোলা করে দেয়। ধনাঢ্যতার শিখরে উপনীত হয়ে তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফলে মুষ্টিমেয় কিছু হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া সবাই নুহ (আ.)-এর দাওয়াতকে তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করে।
যখন হজরত নুহ (আ.) আল্লাহতায়ালার প্রেরিত ওহি দ্বারা জানতে পারেন যে, এরা কেউ কখনোই ইমান আনবে না। বরং কুফর শিরক ও পথভ্রষ্টতার ওপরই অনড় থাকবে, তখন তিনি নিরাশ হয়ে আল্লাহর কাছে মুমিনদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করলেন এবং কাফেরদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। তিনি দোয়া করলেন হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে একজন কাফির গৃহবাসীকেও তুমি ছেড়ে দিয়ো না।
যদি তুমি ওদের রেহাই দাও, তাহলে ওরা তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করবে এবং ওরা পাপাচারী ও কাফির ছাড়া কোনো সন্তান জন্ম দেবে না।’ আল্লাহতায়ালা তৎক্ষণাৎ তার দোয়া কবুল করে নৌকা তৈরি করার নির্দেশ দিলেন। যখন প্লাবন শুরু হয়, নুহ (আ.) ইমানদার ব্যক্তিরা এবং জোড়া জোড়া প্রাণী নিয়ে নৌকায় চড়ে বসলেন।
সেই মহাপ্লাবন যখন ফুরিয়ে যায়, তখন নুহ (আ.)-এর মনে পড়ে একজন বুড়ির কথা। যিনি ইমান এনেছিলেন। কিন্তু প্লাবন শুরু হওয়ার পর তাড়াহুড়ায় নুহ (আ.) সেই বুড়ির কথা ভুলে গিয়েছিলেন। নুহ (আ.) অনুতপ্ত হলেন এবং চিহ্ন খুঁজে খুঁজে বুড়ির বাড়ি উপস্থিত হয়ে বুড়িকে ডাক দিলেন। বাড়ির ভেতর থেকে আওয়াজ এলো ‘কে আপনি?’ নুহ (আ.) জবাব দিলেন ‘আমি আল্লাহর নবি নুহ।’
বুড়ি বললেন, ‘আমিও তাই ধারণা করেছিলাম। কেননা আপনি ওয়াদা করেছিলেন যখন প্লাবন শুরু হওয়ার আলামত পাবেন, তখন আমাকে সংবাদ দেবেন। আপনি সম্ভবত সেই সংবাদ দিতেই এসেছেন!’ সেই মহাপ্লাবনের পরও বুড়ির বাড়ি ও বুড়িকে অক্ষত অবস্থায় পেয়ে হজরত নুহ (আ.) তৎক্ষণাৎ সেজদায় লুটিয়ে পড়ে বললেন, ‘মাবুদ, তোমার লীলা বোঝা বড় দায়।’
আল্লাহতায়ালা হজরত নুহ (আ.) কে বললেন, ‘হে নুহ! বিপদে তাড়াহুড়ায় তুমি তোমার উম্মতকে ভুলে যেতে পার, কিন্তু আমি আল্লাহ আমার কোনো বান্দাকে কখনোই ভুলি না।’
তিনি তো সেই মহান সত্তা, যিনি শত অবাধ্যতায়ও বান্দাকে ভোলেন না। বান্দা যখনোই নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তিনি খুশি হয়ে যান।