ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মুজাটির ২নং ওয়ার্ড রাজের মোড় এলাকার সুখী মনি পাল (৯৫)। এই বয়সে নাতিপুতি নিয়ে সময় কাটানোর কথা থাকলেও ভাগ্যদোষে দুই বছর ধরে নিজগৃহে শিকলে বন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীহারা বৃদ্ধা সুখী মনি পাল।
তিনি ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত শিব প্রসাদের স্ত্রী। তবে বয়স ৯৫ বছর হলেও তার কপালে জোটেনি সরকারি কোনো প্রকার ভাতা কিংবা আর্থিক সহায়তা। এমনকি সুখীর সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেনি কোনো জনপ্রতিনিধিও।
বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়ির বারান্দার খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বৃদ্ধা সুখী মনিকে। শিকলে বন্দি অবস্থায় ওই বৃদ্ধা বারবার বলছেন- ‘আমাকে হাসপাতালে রেখে আয়! আর দুইটা ভাত দে! আমি মরতে চায় না, আমি বাঁচতে চাই।’
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাড়ির ইঞ্জিন মেরামত করেই ২ ছেলে ৪ মেয়ে নিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার সংসার চালাতেন সুখী পালের স্বামী শিব প্রসাদ। তিন মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর ১৯৮২ সালে ব্রেনস্ট্রোকে মারা যান শিব প্রসাদ পাল।
স্বামী মারা যাওয়ার পর অভাবের সংসারে সুখী মনির কাল হয়ে দাঁড়ায় পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির ৪০ হাজার টাকা। মেয়েরা জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যায় সেই টাকা। অভাবের সংসারে টাকার শোক সইতে না পেরে ১২ বছর পূর্বে সুখী মনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। মায়ের এমন পরিস্থিতি দেখে ছোট ছেলে যতন শত কষ্টের পরেও মায়ের দায়িত্ব নেয়।
এ অবস্থায় কয়েকবার নিখোঁজ হয় বৃদ্ধা সুখী মনি। হারিয়ে যাবে সেই ভয়ে, গত দুই বছর ধরে প্রতি দিন বাড়ির বারান্দার খুঁটির সঙ্গে পায়ে শিকল দিয়ে ওই বৃদ্ধাকে বেঁধে রাখেন পরিবারের লোকজন। আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নত চিকিৎসা পেলে সুখী মনি পাল স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন- এমনটাই জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও তার পরিবার।
মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া দিনমুজর যতন মায়ের জন্য সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুর দিয়ে দুই বেলা ঠিকমতো খাবার খেতে পারি না, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ কোথায় পাবো বলেন? আমার মায়ের জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চাইছি।
তিনি বলেন, একবার হারিয়ে যাওয়ার তিন মাস পর টাঙ্গাইল থেকে খুঁজে নিয়ে আসছি। সেই ভয়ে দুই বছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। বর্তমান ওয়ার্ড কমিশনার মতিউর রহমানকে অনেকবার বলেছি কোনো লাভ হয়নি। এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি।
প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম রাজু বলেন, বৃদ্ধা সুখী মনি মানসিক রোগী কোথাও গেলে আর বাড়ি ফিরতে পারে না। দুই বেলা দুই মুঠো ভাত আর ভালো চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
মুজাটি ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার মতিউর রহমান মতি বলেন, সুখী মনি পালের এনআইডি কার্ডের জটিলতায় সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম লুৎফর রহমানকে জানান, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সুখী মনি পালের চিকিৎসাসহ যাবতীয় সহায়তা প্রদান করতে আমি নিজেই তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।