ফেরেশতারা মহান আল্লাহর অন্যতম সৃষ্টি। যাদের নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফেরেশতাদের নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৮৫) তাদের গুনাহ করার ক্ষমতা নেই।
তারা শুধু মহান আল্লাহর আদেশ পালন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদের আদেশ করা হয়। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
ঈমানদারের জন্য তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যারা ফেরেশতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়, তাদের ঈমান নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা, তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসুলের প্রতি এবং এই কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসুলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন এবং ওই কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসুল এবং পরকাল সম্বন্ধে অবিশ্বাস করে, নিশ্চয়ই সে সুদূর বিপথে বিভ্রান্ত হয়েছে। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩৬)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর কিছু ফেরেশতার নাম উল্লেখ করেছেন। এই লেখায় আমরা তাঁদের নাম জানার চেষ্টা করব।
জিবরাঈল (আ.) : মহান আল্লাহর বার্তা বাহক ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.)। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৮)
সুরা শুয়ারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে তাঁকে ‘রুহুল আমিন’ অর্থাৎ সৎ-আত্মা উপাধিতে সম্বোধন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সুরা মারিয়ামের ১৯ নম্বর আয়াতে ‘রসুলু রব্বিকি’ তথা তোমার রবের বার্তাবাহক উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মিকাইল (আ.) : তাঁর কাজ হলো বৃষ্টি বর্ষণ ও উদ্ভিদ উৎপাদন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মিকাইল আল্লাহর নৈকট্যশীল ও মর্যাদাবান ফেরেশতাদের একজন। তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ’ (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১০৫)
পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের ও তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈলের ও মিকাইলের শত্রু সাজবে, নিশ্চয়ই আল্লাহও (এসব) কাফিরদের শত্রু। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৮)
মালেক (আ.) : জাহান্নামের ব্যবস্থাপক ফেরেশতার নাম মালেক। সামুরাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমি দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসেছে। তারা বলল, যে অগ্নি প্রজ্বলিত করছিল সে হলো দোজখের তত্ত্বাবধায়ক মালেক আর আমি জিবরাঈল এবং ইনি মিকাঈল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৩৬)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর এই ফেরেশতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদের শেষ করে দেন। সে বলবে, নিশ্চয়ই তোমরা অবস্থানকারী। ’ (সুরা যুখরুফ, আয়াত : ৭৭)
হারুত-মারুত (আ.) : পবিত্র কোরআনে এই দুই ফেরেশতার নাম একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০২)
মালাকুল মাওত : তিনি হলেন মানুষের রুহ কবজকারী ফেরেশতা। পবিত্র কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, তোমাদের মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফেরেশতা যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১১)