রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাতেই মহান আল্লাহ মানবজাতির জন্য পথনির্দেশনামূলক কিতাব ‘কুরআন’ নাজিল করেছেন আর এই রাতটিই ছিলো কদরের রাত । আল্লাহ বলেন, আমি একে নাযিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা আল কদর)।
ভিন্ন স্থানে এ রাতটিকে বরকতময় রাতও বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, শপথ, সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির হয়। আমার আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা দুখান : আয়াত ১-৬)।
‘হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’ কথার অর্থ কী? হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’। (তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাস : পৃষ্ঠা ৬৫৪)। তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, ‘এ রাতের ইবাদত, তিলাওয়াত, দরুদ ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’
সুতরাং লাইলাতুল ক্বদরে আল্লাহর ওই বান্দা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন, যাদের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক বেশি। যিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই নিজের জীবন পরিচালিত করবেন। বাস্তবজীবনে কোরআন-সুন্নাহর আমলে সাজাবেন জীবন। আর তারাই হবেন সফল।
অনেক আলেমের গবেষণা ও ব্যাখ্যা মতে, ২৭ রমজানের রাত (চন্দ্রোদয় থেকে শুরু হয় ক্ষণগণনা, রাত আগে আসে, দিন পরে) কদরের সম্ভাব্য রাত। তবে সেটি চূড়ান্ত মত নয়। এজন্য রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন : ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাতগুলো। তাই আমাদের উচিত এই সবগুলো রাতে শবে কদরের মতো আমল করা।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন। উম্মতে মুহাম্মদীর উদ্দেশে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাজিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তাঁর সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম শরিফ)।
এর মধ্য দিয়ে আমাদের আরেকটি বিষয় বেরিয়ে এলো। তা হলো ইতিকাফ করা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মসজিদে অন্তত একজন ইতিকাফ করা আবশ্যক। শবেকদরের তালাশে আমাদের উচিত পুরো ১০ দিন না পারলেও যতটুকু সম্ভব ইতিকাফে অংশ নেওয়া।
মর্যাদার এ রাত পেলে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করবে? কী চাইবে? এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) আপনি বলে দিন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়ব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নী।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)।