আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দোহাকে বয়কটের দুই বছরের বেশি সময় পর পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং দূতাবাস চালু করছে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা অবসানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে মঙ্গলবার দুই দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বর্তমানে উভয় দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক সক্রিয় করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মধ্যে উভয় দেশে পুনরায় দূতাবাস খোলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
কাতারের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অফিস এক বিবৃতিতে ‘শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দূতাবাস পুনরায় চালু করার কাজ চলছে’ বলে নিশ্চিত করেছে।
উপসাগরীয় এই দেশটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী জুনের মাঝামাঝি নাগাদ দূতাবাসগুলো নতুন রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে পুনরায় চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চতুর্থ একটি সূত্র বলেছে, উভয় দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোমাত্রায় স্থাপন করা হবে।
বছরের পর বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈরিতার পর গত মাসে ইরান ও সৌদি আরব সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চুক্তি করেছে। এই অঞ্চলের দুই শক্তির দীর্ঘদিনের বিপরীতমুখী সম্পর্ক উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার হুমকি এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করেছে।
এর মাঝে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরানের চুক্তি এই অঞ্চলে যখন দীর্ঘদিনের বৈরীতার অবসান ঘটাচ্ছে, ঠিক সেই সময় কাতার এবং আমিরাতের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের ঘোষণা এলো।
২০১১ সালের বিক্ষোভের পর সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের কারণে সৌদি আরব, মিসরসহ আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ সিরিয়ার সাথে কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছিল। দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের কারণে আসাদ সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের এক দশকের বেশি সময় পর সেই কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়েছে সৌদি আরব, মিসর ও অন্যান্য দেশ।
ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি এবং সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের মধ্যে চলতি সপ্তাহে এক দফা শান্তি আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার পর দুই পক্ষ শত শত বন্দী বিনিময় করেছে। ওই অঞ্চলে সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে কয়েকটি প্রক্সি যুদ্ধের একটি হিসাবে ব্যাপকভাবে দেখা হয় ইয়েমেন সংঘাতকে।
এই সংঘাতে এবারই প্রথম সৌদি আরব এবং ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথিদের মাঝে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। সংঘাতের অবসানে শিগগিরই আরও শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালের মাঝের দিকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন, সহায়তা এবং ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর একযোগে কাতারের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। যদিও দোহা বরাবরের মতো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিরোধের অবসান ঘটাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি চুক্তি সাক্ষরের পর ২০২১ সালে রিয়াদ এবং কায়রো প্রথম দোহাতে নিজ নিজ রাষ্ট্রদূতকে পুনরায় নিয়োগ করে। গত সপ্তাহে কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে বাহরাইন।
তবে বাহরাইন ছাড়া অন্যান্য সব দেশ ২০২১ সালের শুরুর দিকে কাতারের সাথে বাণিজ্য ও ভ্রমণ সম্পর্ক পুনরায় শুরু করেছিল। সেই সময় কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে সময় লাগবে বলে জানিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হয় এবং উভয় দেশের নেতারা মুখোমুখি বৈঠক করেন।