দেশের রাজনীতির অঙ্গনে বড় দলগুলোর মধ্যে অসহিষ্ণুতা বিদ্যমান। একই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দলের নেতাদের উপস্থিতি কিংবা বৈঠক এখন বিরল। সামাজিক অনুষ্ঠানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতি এখন আর দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের একমাত্র কন্যার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাজির হয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। এতে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের কন্যার বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান হয়। সেখানে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাকে দেখা যায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে।
খাবার খেতে একই টেবিলে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ (বীর বিক্রম)।
ফুল নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তাকে বুকে টেনে নিয়ে কোলাকুলি করেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। সে সময় আ স ম আব্দুর রব বলেন, আপনার আব্বা বেঁচে থাকতে আমাকে অনেক সম্মান করতেন। হেমায়েতের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল (ইসলামী আন্দোলনের প্রয়াত যুগ্ম মহাসচিব এটিএম হেমায়েত উদ্দিন)।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আসলে তার সঙ্গে বসে কুশল বিনিময় করেন মুফতি ফয়জুল করীম। সে সময়ে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাসি মুখে হাত মেলাতে দেখা যায় জি এম কাদের ও বিএনপি মহাসচিবকে। তখন সেখানে ছিলেন চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। চরমোনাই পীরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শীতল স্নায়ুযুদ্ধ ভুলে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের দুই নেতা। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আসলেই হাসি মুখে বরণ করেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। মুফতি ফয়জুল্লাহর সঙ্গেও কোলাকুলি করেন ফয়জুল করীম।
২০১৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ে ইসলামী ঐক্যজোট। অনুষ্ঠানে হাত মিলিয়ে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় বিএনপি মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিবকে।
আরও এসেছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজ রাজু, ইসলামী আলোচক মুফতি হাসান জামিল, ছারছীনা দরবারের পীরের বড় ছেলে মুফতি শাহ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমাদ প্রমুখ।
একমাত্র কন্যা’র বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যেভাবে আমরা একত্রিত হয়েছি, আমি বিশ্বাস করি দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে সকল ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয়ে কাজ করলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমরা চাই সমাজের সর্বস্তরে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি প্রকৃত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠিত হোক। সেই লক্ষ্যেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তার পথচলার তিন যুগ অতিবাহিত করছে।