মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। কখনো ছোট, কখনো বড়। ঝড়ের আঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষরা। ঘূর্ণিঝড় থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এতে ক্ষতি কিছুটা কম হবে।
এক. ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রে আবহাওয়ার খবরের দিকে খেয়াল রাখুন। সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা সতর্কতা মেনে চলুন।
দুই. এ সময় কোন এলাকার লোক কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন, গবাদিপশু কোথায় থাকবে, তা আগেই ঠিক করে রাখুন এবং জায়গা দিনে রাখুন।
তিন. প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার, জিনিসপত্র, পানি সংগ্রহ করে রাখুন। পোশাক প্রস্তুত রাখুন। ঘূর্ণিঝড়ের মাসগুলোতে বাড়িতে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুটজাতীয় শুকনো খাবার রাখা ভালো।
চার. মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, এমার্জেন্সি লাইট, এলো আগে থেকে ফুল চার্জ করে রাখুন। আগে থেকেই টর্চ ও মোমবাতির বন্দোবস্ত করে রাখতে হবে।
পাঁচ. জরুরি নথিপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী আগে থেকেই লকারে বা নিরাপদ স্থানে রাখুন।
ছয়. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্য আশ্রয়ে যাওয়ার সময় কী কী জরুরি জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে এবং কী কী জিনিস মাটিতে পুঁতে রাখা হবে, তা ঠিক করে সেই অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
সাত. আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ঘরের মধ্যে একটি পাকা গর্ত করুন। জলোচ্ছ্বাসের আগে এই পাকা গর্তে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।
আট. ডায়রিয়া মহামারির প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে কীভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি করতে হবে, সে বিষয়ে পরিবারের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিন।
নয়. নোংরা পানি কীভাবে ফিটকারি বা ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে নারীদের এবং আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।
এছাড়াও আরও কয়েকটি কাজ, যা আপনি যে কোনো সময় করতে পারেন। তবে এতে শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, আরও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবেন-
এক. বাড়িতে, গ্রামে, রাস্তায় ও বাঁধের ওপর গাছ লাগান।
দুই. যথাসম্ভব উঁচু স্থানে শক্ত করে ঘর তৈরি করুন। পাকা ভিত্তির ওপর লোহার বা কাঠের পিলার এবং ফ্রেম দিয়ে তার ওপর ছাউনি দিন। ছাউনিতে টিন ব্যবহার না করা ভালো। কারণ ঝড়ের সময় টিন উড়ে মানুষ ও গবাদিপশু আহত করতে পারে। তবে শূন্য দশমিক ৫ মিলিমিটার পুরুত্ববিশিষ্ট টিন ও জেহুক ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিন. উঁচু জায়গায় টিউবওয়েল স্থাপন করুন, যাতে জলোচ্ছ্বাসের নোনা ও ময়লা পানি টিউবওয়েলে ঢুকতে না পারে।
চার. জেলে নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারে রেডিও রাখুন। সকাল, দুপুর ও বিকেলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করুন।
পাঁচ. জলোচ্ছ্বাসের পানির প্রকোপ থেকে রক্ষার নানারকম শস্যের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।
ছয়. বাড়িতে ও রাস্তায় নারকেল, কলাগাছ, বাঁশ, তাল, কড়ই ও অন্যান্য শক্ত গাছপালা লাগান। এসব গাছ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বেগ কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষ দুর্যোগের কবল থেকে বাঁচতে পারে।
সাত. পরিবারের নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে প্রত্যেকেই সাঁতার শিখুন।