মসজিদে কোনও মুসল্লির জন্য কাতার নির্ধারিত রাখা যাবে?

মসজিদে গিয়ে মুসলিমেরা সবকিছু ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে আল্লাহর সামনে নিজেকে সপে দেন। এখানে পরস্পরের মাঝে কোনও পার্থক্য থাকে না। নেককার ও ইমানদার ব্যক্তিরা সবসময় মসজিদে গিয়ে অন্তরের প্রশান্তি খোঁজেন। যারা সবসময় মসজিদে যান মসজিদের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক বৃদ্ধি করেন তাদের জন্য জান্নাতে বিশেষ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালার মেহমানদারি

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যায়, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যতবার সে মসজিদে যায়, ততবারই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। -(সহিহ বুখারি, ৬৩১, সহিহ মুসলিম, ১৫৫৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৪৯৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, ২০৩৭)

প্রথম কাতারে বসার ফজিলত

এছাড়াও মসজিদে আগে আগে গিয়ে প্রথম কাতারে বসারও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারতো, আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মধ্যে কী ফজিলত রয়েছে, আর লটারি ছাড়া সেটি পাওয়া সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফজিলত রয়েছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগে আসত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯০)।

মসজিদে স্থান নির্ধারণ করার বিধান

ফজিলত অর্জনের জন্য মসজিদে গিয়ে আগে আগে প্রথম কাতারে বসার চেষ্টা করা উচিত সবার। কিন্তু প্রথম কাতারে বসতে অথবা মসজিদে সুবিধাজনক জায়গায় বসতে কোনও ব্যক্তি জন্য জায়গা নির্ধারণ করা উচিত হবে না।

ফেকাহবিদ আলেমরা বলেন, মসজিদে শুধুমাত্র ইমামের স্থান নির্ধারিত। এছাড়া মুয়াজ্জিন বা অন্য কারও স্থান নির্ধারিত নয়। মুয়াজ্জিন যেকোনও কাতারে দাঁড়িয়ে ইকামত দিতে পারবে। তাই মুয়াজ্জিন, মসজিদের অন্য কোনও কর্মকর্তা বা এলাকার কোনও মুসল্লির জন্য সবসময় জায়নামাজ বিছিয়ে মসজিদের কাতারে জায়গা দখল করে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

আলেমরা বলেন, যিনি সবার আগে মসজিদে আসবেন, তিনিই প্রথম কাতারে ইমামের পেছনে বসতে পারবেন। এক্ষেত্রে এলাকার গণ্যমান্য, ধনী-গরিব কোনও পার্থক্য নেই।

তাই কোনো ব্যক্তির যদি মসজিদে এসে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তাদের উচিত আগে আগে মসজিদে চলে আসা।

একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক লোক সবার ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে আসছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘বসো! তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১১১৮)। ঘাড়ের ওপর দিয়ে আসার কারণে মানুষের অন্তরে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। এ কারণেই রাসুল (সা.) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন।

আলেমদের প্রাধান্য

তবে সম্ভব হলে ইমামের সরাসরি পেছনের কাতারে আলেম, মুফতি বা ধর্মীয় মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে ভালো জানাশোনা আছে এমন ব্যক্তিদের দাঁড়ানো উচিত বা তাদের দাঁড়ানোর জন্য সুযোগ করে দেওয়া ভালো।

যেন নামাজে ইমামের কোনও ভুল হয়ে গেলে তারা একেবারে কাছে থেকে ভুলটি সংশোধন করে দিতে পারেন। অথবা ইমামের শরীয়ত সম্মত কোনও সমস্যা দেখা দিলে- যেমন হঠাৎ প্রাকৃতিক কারণে অজু নষ্ট হয়ে গেলে- ইমাম পেছন থেকে এমন একজনকে বাকি নামাজ শেষ করার জন্য নিজের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন, যিনি মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ সম্পন্ন করা পরিমাণ জ্ঞান রাখেন। আর সবার নামাজ বিশুদ্ধভাবে আদায়ের জন্য ইমামের পেছনে আলেম, মুফতি বা ধর্মীয় মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে ভালো জানাশোনা মানুষদের দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। -(মুসলিম, ১২২, তিরমিজি, ২২৮, রদ্দুল মুহার,১/৬৬২, ফতোয়ায়ে মাহমূদিয়া, ১-/৫৩)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক খতম কুরআন পড়ার সওয়াব

নূর নিউজ

কুরবানির প্রস্তুতি নিন

নূর নিউজ

১৪ নারী ছাড়াও আরও যাদের বিয়ে করা হারাম

নূর নিউজ