ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগের সংক্রমণ কমাতে কাজ করছে ‘ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রাম’। তারা মশার ভেতর ওলবাকিয়া নামে একটি ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেয়। ফলে মশা রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ব্রাজিলে বড় আকারে ঠিক সেই কাজটি করতে চাইছে অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিওক্রুজের সঙ্গে মিলে এই কাজ করতে চায় তারা।
ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রামের সিইও স্কট ও’ নিল জানান, ‘ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া মশার ভেতর ঢোকানো গেলে সেটা মশার মধ্যে থাকা যে ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করে, সেটির রেপ্লিকেট হওয়া প্রতিহত করে। মানুষ থেকে মানুষে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও পীতজ্বরের ভাইরাস ছড়াতে ‘রেপ্লিকেটের’ প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে সেটা সম্ভব হয় না।’
অনেক জরিপে প্রমাণ পাওয়া গেছে, ওলবাকিয়া আক্রান্ত মশাকে অন্যান্য মশার মধ্যে ছড়িয়ে দিলে ডেঙ্গু বা জিকার যে কারণ, সেই বিপজ্জনক প্যাথোজেনগুলোর সংক্রমণ অনেকখানি কমে যায়। এছাড়া এই পদ্ধতির আরও অনেক সুবিধা আছে।
স্কট ও’ নিল বলছেন, ‘এই পদ্ধতি আপনাকে শুধু একবার প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি মশা মারতে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে প্রতিবছরই সেটা করতে হয়। অথচ আমাদের পদ্ধতিটা একবার ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়াটা মশার ভেতর স্থায়ীভাবে থেকে যায়। ফলে পদ্ধতিটা আরেকবার ব্যবহার না করলেও সেই মশাই মানুষকে রক্ষা করে।’
ওলবাকিয়া আক্রান্ত মশা তার সন্তানদের মধ্যেও এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দেয়। গত ১০ বছরে এক ডজনেরও বেশি দেশে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফল ছিল আশাব্যঞ্জক।
কিছু জায়গায় এটি মানুষ বা পরিবেশের ওপর আপাতদৃষ্টিতে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলা ছাড়াই ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়েছে। তবে ব্রাজিলের ক্ষেত্রে এখনও কিছু প্রশ্ন আছে।
ফিওক্রুজ সংস্থার কর্মকর্তা রাফায়েল ফ্রাইতাস বলছেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার তথ্য বলছে, সেখানে ডেঙ্গু সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। কিন্তু ব্রাজিলের রিওতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে আমরা তেমনটা দেখতে পাচ্ছি না। তাই পদ্ধতিটা ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে ব্রাজিলে কেন কম কার্যকরি হচ্ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।’
বিশ্বে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকা দেশগুলোর একটি ব্রাজিল। মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ কমাতে দেশটিতে ওলবাকিয়া আক্রান্ত মশার বংশবৃদ্ধি করতে একটি স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে, যার কাজ আগামী বছর শেষ হবে। গাড়ি, মোটরসাইকেল ও ড্রোন দিয়ে মশা ছাড়া হবে।’
স্কট ও’ নিল বলছেন, ‘আমরা সপ্তাহে ১০০ মিলিয়ন মশা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করছি। অর্থাৎ বছরে পাঁচ বিলিয়ন। ব্রাজিলের কয়েকটি শহরে একসঙ্গে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই সংখ্যক মশা দরকার।’
পুরো ব্রাজিলে এই পদ্ধতি কার্যকর প্রমাণিত হলেও এটি দিয়ে মশাবাহিত সব রোগ দমন করা যাবে না। ফলে টিকা উদ্ভাবনের মতো কাজের গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও অনেক বছর থাকবে।