ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ডেনমার্ক। যদিও ইসলামের পবিত্র এই ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর সুযোগ তাদের করে দেওয়া হয়েছিল এবং পুলিশি পাহারায় তারা পবিত্র কোরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়া আবারও কোরআন অববমাননার ঘটনায় কড়া নিন্দা জানিয়েছে ইরাক ও বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার কোপেনহেগেনে ইরাকি দূতাবাসের বাইরে ‘ড্যানিশ প্যাট্রিয়টস’ নামে একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরাক ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এর আগে গত শুক্রবার উগ্র এই ডানপন্থি গোষ্ঠী ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে একই ধরনের কাজ করেছিল।
এই ঘটনার পর প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারী বাগদাদে বিক্ষোভ করেন এবং তারা ডেনমার্ক দূতাবাসের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়া সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পরিকল্পিতভাবে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার পর গত সপ্তাহে বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারী জনতা। সে সময় তারা দূতাবাসের দেওয়াল বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। গত এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার কোরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন তারা।
সোমবারের ঘটনায় ডেনমার্কে দুই ইসলাম বিদ্বেষী বিক্ষোভকারী পবিত্র কোরআন অবমাননা করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পাশেই মাটিতে ইরাকের পতাকা পড়ে ছিল।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড চরমপন্থা এবং ঘৃণার ভাইরাস ছড়ায় যা সমাজের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
এদিকে ডেনমার্কের রাজধানীতে কোরআনের সর্বশেষ এই অবমাননার প্রতিবাদে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনুমোদন করার জন্য বিক্ষোভকারীরা ডেনমার্ক ও সুইডেনের প্রতি ক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এছাড়া তুরস্ক এই ঘটনাকে কোরআনের প্রতি ‘ঘৃণ্য আচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে আলজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিন্দা প্রকাশের জন্য ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত ও সুইডেনের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে।
এর আগে সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে গত শনিবার ইরানে বিক্ষোভ করে মানুষ। কাতারের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে দেশটির সর্ববৃৎ মার্কেট সউক আল বালাদি মার্কেট থেকে সুইডেনের পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অবশ্য অবমাননার সুযোগ করে দিয়ে কোরআন পোড়ানোর নিন্দা জানিয়েছে ডেনমার্ক। এক টুইট বার্তায় ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে: ‘হাতে গোনা কয়েকজন আজ কোরআন পোড়ানোর যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার নিন্দা জানাচ্ছে ডেনমার্ক।’
এতে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের উস্কানিমূলক এবং লজ্জাজনক কর্মকাণ্ড ড্যানিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে না। সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়, সহিসংতা কখনোই কোনও প্রতিক্রিয়া হতে পারে না।
এর আগে কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে গত শনিবার বাগদাদে বিক্ষোভ হয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা যাতে ড্যানিশ দূতাবাসে পৌঁছাতে না পারে তার জন্য তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। এছাড়া শহরের গ্রিন জোনের সঙ্গে সংযোগকারী সেতুটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ সময় তারা মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
অবশ্য কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার বাগদাদে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে ইরাক। একইসঙ্গে স্টকহোমে নিযুক্ত ইরাকের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। স্টকহোমে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘিরে ইরাক-সুইডেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চরম অবনতির মাঝে ইরাকের সরকার ওই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
মূলত স্টকহোমে ইরাকের একজন খ্রিস্টান শরণার্থীকে সুইডেনের আদালত দ্বিতীয়বারের মতো কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দেওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ অবশ্য কোরআন অবমাননা রুখতে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিলেও সবার সমাবেশ করার আইনি অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয় আদালত।
এছাড়া কোরআন পোড়ানোকে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম-বিদ্বেষ হিসেবে উল্লেখ করে এই ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছে সুইডেনের সরকার।