সুস্থ শরীরের চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ নেই। আমরা যদি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেছে নেই তবে তা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা থেকে দূরে থাকতে কাজ করবে। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বাকি কাজগুলোও সহজ হয়ে যায়। একজন অসুস্থ ব্যক্তি কোনো কাজই ঠিকভাবে করতে পারেন না। সুস্বাস্থ্য আমাদের সমস্ত সুখ এবং স্বস্তির মূল কেন্দ্র। তাই স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করার জন্য সঠিক খাদ্য বেছে নেওয়া জরুরি। একাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ফাংশনাল ফুড।
ফাংশনাল ফুড কী?
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ফাংশনাল ফুড আসলে কী মূলত যে সব খাবারে বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান আছে, সেই সব খাদ্যকে ফাংশনাল ফুড বলতে পারি এই ফুড আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যকারিতা বাড়াতে এবং কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান থাকায় এই ফুড আমাদের শরীরে কার্যকরীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। হলুদ, আদা, গাজর, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, দারুচিনি, ইত্যাদি খাবার ফাংশনাল ফুড হিসেবেও পরিচিত।
ফাংশানাল ফুডের ইতিহাস
সুস্থ জীবনযাপনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে আশির দশকে জাপানে প্রথম ফাংশনাল ফুডের ধারণা উদ্ভূত হয় এবং ১৯৯১ সালে এটি জাপানে আইনি ভিত্তি পায়। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস করে, যেখানে ৩১ নং ধারার অধীনে ফাংশনাল ফুড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেসব খাবার শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তাদের ফাংশনাল ফুড বলা হয়। জাপানিদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা এবং ভালো খাদ্যাভ্যাস ফাংশনাল ফুডের অগ্রগতির নেপথ্যে কাজ করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ফুডের চাহিদা অনেক বেড়ে চলেছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ফাংশনাল ফুড জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ফাংশনাল ফুডের উপকারিতা
ফাংশনাল ফুডে বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান থাকে যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের জন্য পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে দেয় যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ফুড অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন পিরিয়ডের ব্যথা, জয়েন্ট পেইন, অ্যাসিডিটি এবং লিভারের অসুখ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গোলমরিচে থাকা পাইপেরিন একটি বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান যা ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সেইসঙ্গে এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে যা হেপাটিক স্টেটোসিসের উন্নতির মতো স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়। পিপারিন প্রদাহজনিত রোগের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে হয়। যে কারণে এটি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো তীব্র ব্যথায় দারুণ কার্যকরী।
হলুদে থাকা কারকিউমিন বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে। হৃদরোগ, আলঝাইমার্স, এমনকী মরণব্যাধী ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকরী এই উপাদান। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এর রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। এছাড়া সবগুলো খাবারেরই রয়েছে আলাদা আলাদা উপকারী বৈশিষ্ট্য।
অর্গানিক ফাংশনাল ফুড
আমাদের দেশে ভেজাল খাবারে ছেয়ে আছে চারপাশ। এখন প্রায় সব খাবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক। এগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হতে পারে।
অর্গানিক ফুড উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম সার ও কীটনাশক, বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক, ফুড এডিটিভস, ইরেডিয়েশন, জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) পদ্ধতিতে বা এর মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে কাজ করে অর্গানিক ফাংশনাল ফুড। শতভাগ খাঁটি অর্গানিক পণ্য কি না তা বোঝার জন্য ইউএসডিএ, নন-জিএমও, এফডিএ ও জিএমপি কর্তৃক প্রদত্ত সনদ দেখে নিন। ফাংশনাল ফুড অর্গানিক হলে খাদ্যের গুনগত মান নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।