বাংলাদেশের সঙ্গে খাদ্য, জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং উৎপাদন খাতে বাণিজ্য জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। বুধবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে অনুষ্ঠিত সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক বৈঠকে এ বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা। দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই এ বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের বিনিয়োগ-বিষয়ক মন্ত্রী খালিদ এ. আল ফালিহ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৌদি আরবের মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৌদি আরবের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, এতদিন বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুধু কয়েকটি খাতে বিদ্যমান ছিল। তবে এখন সময় এসেছে আমরা কীভাবে উভয় দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্যকে সহজ করতে পারি, তার উপায়গুলো খুঁজে বের করা।’ বাংলাদেশের প্রতি সৌদি আরবের সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকার উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশ থেকে লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের আন্তরিকতার প্রশংসা করে সালমান এফ রহমান ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ থেকে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলেছে।
সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। সৌদি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৩০০ একর জমি বরাদ্দ রেখেছে। বরাদ্দকৃত জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য সৌদি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য ইপিজেডগুলোতেও বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।
সৌদি আরবের বিনিয়োগ বিষয়ক উপমন্ত্রী বদর আই. আলবদর বলেন, বাংলাদেশে আমরা বহুমুখী বিনিয়োগ করতে চাই। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কয়েকটি খাত দিয়ে বাণিজ্য শুরু করলেও ভবিষ্যতে সৌদি আরব আরও বেশি খাতে বাণিজ্যে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রতি সৌদি আরবের চলমান সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন এই সৌদি উপমন্ত্রী।
বৈঠকে সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আয়াদ আল আমরি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈশা ইউসেফ ঈশা আল-দুহাইলান, এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মো. মুনির হোসেনসহ বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (জি-২-জি) ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) ও সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালির উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’-এর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)-এর সিইও জেনস ও ফ্লো চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী ও সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরএসজিটি একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর, যা সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল এবং মালয়েশিয়ান মাইনিং কোম্পানির (এমএমসি) মধ্যে অংশীদারিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। আরএসজিটিআই আগামী ২২ বছর পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে। প্রকল্পে সৌদি প্রতিষ্ঠানের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ইক্যুইটি’র পরিমাণ ৩০% ও অবশিষ্ট ৭০% ঋণ। আপফ্রন্ট ফি ২ কোটি ডলার, কনসেশন ফি ১৮ ডলার, ট্যারিফ রেভিনিউ উভয়পক্ষ ৫০% হারে। এ ছাড়া বাৎসরিক কনসেশনেয়ার ফি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পাবে ২৫০ ডলার। যা প্রতি বছর ২.৪% হারে বাড়বে। সব মিলিয়ে ২২ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হবে ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (বর্তমান ডলার দর ১১০.১৯ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় ৩ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা)।