কুয়েতে বিদেশি পেশাজীবীদের জন্য বসবাসের অপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি না থাকলেও সপরিবারে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন দেশটিতে কর্মরত অন্তত ১৪টি নিদির্ষ্ট পেশার মানুষ। কুয়েত সরকারের নতুন এই ভিসা নীতি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। শুরু হয়েছে ভিসা প্রদানও।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ও উন্নত দেশগুলোর একটি কুয়েত। তবে এর অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো অভিবাসী কর্মী। কুয়েতের মোট জনসংখ্যা ৪৬ লাখ।
এর মধ্যে ৩২ লাখই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশি।
দেশটিতে এক্সপ্যাটস রেসিডেন্স ল-এর অধীনে প্রবাসীদের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় সপরিবারে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যদের ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় অবস্থান ঠেকাতে এখন থেকে প্রায় এক বছর আগে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা বন্ধ করে দেয় কুয়েত কর্তৃপক্ষ।
তবে পুরনো পদ্ধতির কিছু সংস্কার, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের পর প্রবাসীদের জন্য আবারও ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা চালু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত এক নীতিমালা জারি করে যা রোববার (২৮ জানুয়ারী) থেকে কার্যকর হয়েছে।
নতুন নিয়মে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার আবেদনকারীর (নতুন আবেদনকারী) অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট চাকরি ও মাসিক বেতন অন্তত ৮০০ দিনার হতে হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা তিন লাখ টাকার বেশি। তবে কুয়েতে কাজ করছেন এমন নির্দিষ্ট ১৪টি পেশার মানুষদের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি না থাকলেও চলবে।
পেশাগুলো হলো সরকারি খাতের উপদেষ্টা, বিচারক, আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ ও আইনি গবেষক। চিকিৎসা খাতে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা। স্কুল প্রশাসক, ভাইস প্রিন্সিপাল, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, সমাজকর্মী ও গবেষণা সহকারী।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা, প্রকৌশলী, মসজিদের ইমাম, ধর্ম প্রচারক ও মুয়াজ্জিন। সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক। নার্সিং স্টাফ তথা চিকিৎসাসেবা খাতের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা, নার্স, প্যারামেডিকস এবং চিকিৎসা প্রযুক্তিগত পদে কর্মরক ব্যক্তিরা।
সরকারি খাতের সমাজকর্মী ও মনোবিজ্ঞানী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, ফেডারেশন ও স্পোর্টস ক্লাবের সাথে যুক্ত কোচ ও ক্রীড়াবিদ, পাইলট ও ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের দাফন-কাফনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।
তবে কুয়েতে বৈধভাবে বসবাসকারী বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণকারী শিশু যাদের বয়স ৫ বছরের বেশি নয়, তাদের ৮০০ দিনার মাসিক বেতনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নতুন এই নির্দেশিকা এবং শর্ত মেনে এখন থেকে কুয়েত প্রবাসীরা তাদের পরিবারকে নিয়ে কুয়েতে বসবাস করতে পারবেন।
মূলত বিভিন্ন দেশ থেকে কুয়েতে আসতে ভিসার কোন বাধাবাধ্যকতা না থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিতে হয় বিশেষ অনুমতি। তাই কুয়েতে বিভিন্ন খাতে কাজের সুযোগ থাকলেও ভিসা জটিলতার কারণে সুযোগটি নিতে পারছে না বাংলাদেশ।
নতুন করে ভিজিট ভিসার নিয়ম পরিবর্তন করার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কুয়েত চায় তাদের দেশে শিক্ষিত ও দক্ষ প্রবাসীরা সফরে আসুক। তবে দীর্ঘদিন পর ভিজিট ভিসা চালুর সুখবর পেলেও সাধারন প্রবাসীরা হতাশ। পেশাজীবীদের বাইরেও যাতে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়, কর্তৃপক্ষের প্রতি সেই আহ্বান জানিয়েছেন তারা।