রাত জেগে ইবাদত করার সহজ পদ্ধতি

কোরআন ও হাদিসে রাত জেগে ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে রাত জেগে ইবাদত করাকে মুত্তাকী বান্দাদের বিশেষ গুণ বলা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, তারা রাতের সামান্য অংশই ঘুমিয়ে কাটাতো। (সুরা যারিয়াত, আয়াত, ১৭)

এখানে মুমিন মুত্তাকীদের এই গুণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে রাত্রি অতিবাহিত করে, কম নিদ্রা যায় এবং অধিক জাগ্রত থাকে। যারা তাদের রাতসমূহ পাপ-পঙ্কিলতা ও অশ্লীল কাজ-কর্মে ডুবে কাটায় এবং তারপরও মাগফিরাত প্রার্থনা করার চিন্তাটুকু পর্যন্ত তাদের মনে জাগে না এরা তাদের শ্রেণীভুক্ত নয়।

অনেকেই রাত জেগে ইবাদতের চিন্তা করেন কিন্তু পারির্শ্বিক বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠে না। এখানে রাত জেগে ইবাদতের কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সারা রাত জেগে ইবাদত করা

সারা রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ বান্দাদের গুণ। রাত জেগে তারা আত্মার প্রশান্তি লাভ করেন। অধিক রাত জাগরণের কারণে তারা ক্লান্ত হন না, রাতে নির্বিঘ্নে ইবাদতের পরিবেশ পেতে তারা দিনের বেলা ঘুমিয়ে নেন। প্রথম যুগের বুজুর্গ আলেমদের কেউ কেউ এভাবে সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। তাদের কেউ কেউ এশার অজুতে ফজর নামাজ পড়তেন।

আবু তালেব মক্কী বর্ণনা করেছেন, ৪০ জন তাবেয়ি এমন ছিলেন যারা সারা জেগে ইবাদত করতেন। তাদের কয়েকজন এমন ছিলেন যে টানা ৪০ বছর এই আমল অব্যহতভাবে করে গেছেন।

অর্ধেক রাত জেগে ইবাদত

পূর্ববর্তী যুগের বুজুর্গ আলেমদের মধ্যে এমন ইবাদতকারীর অসংখ্য ছিল। এক্ষেত্রে উত্তম হলো রাতের এক তৃতীয়াংশ ও শেষ এক ষষ্ঠাংশ ঘুমিয়ে অতিবাহিত করা।যেন ইবাদত ও জাগরণ মধ্যস্থলে হয়।

রাতের এক তৃতীয়াংশ জেগে ইবাদত করা

এভাবে যারা ইবাদত করার ইচ্ছা করেন, তাদের জন্য রাতের প্রথমার্ধ এবং এক ষষ্ঠাংশ ঘুমিয়ে কাটানো উত্তম। রাতের শেষ ভাগে কিছুটা ঘুমিয়ে নিলে ফজর নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। এতে করে ফজরের সময় তন্দ্রা আসে না। এছাড়া রাতের শেষ অংশের ঘুমের কারণে চেহারায় রাত জাগার ছাপ পড়ে না।

রাতের এক ষষ্ঠাংশ বা এক পঞ্চমাংশ জেগে ইবাদত করা

এক ষষ্ঠাংশ বা এক পঞ্চমাংশ জেগে ইবাদত করেন তাদের জন্য উত্তম হলো রাতের শেষার্ধে জাগা। এর আগে ঘুমিয়ে নেওয়া।

রাতে জেগে ইবাদতের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ না করা

অনেকে রাত জেগে ইবাদত করতে চান। তবে রাত জাগার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রথম রাতে ঘুম আসা পর্যন্ত জাগ্রত থাকা এবং এরপর যখন ঘুম ভাঙবে তখন উঠে ইবাদত করা শ্রেয়। আবার প্রবল ঘুম এলে ঘুমিয়ে পড়বেন। এই অবস্থায় এক রাতে দুইবার ঘুমানো ও দুইবার জাগা হবে। এভাবে রাত জেগে ইবাদত করা উত্তম।

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে ইবাদতের জন্য রাত জাগতেন। হজরত ইবনে ওমর ও অন্যান্য সাহাবিরাও এভাবে রাত জাগতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাগরণ পরিমাণের দিক থেকে সবসময় একই রকম ছিল না। তিনি কখনো অর্ধেক রাত জাগতেন, কখনো রাতের এক তৃতীয়াংশ, কখনো দুই তৃতীয়াংশ এবং কখনো এক ষষ্ঠাংশ জাগতেন। সূরা মুযযাম্মিলের এক আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাত জাগার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে,

اِنَّ رَبَّکَ یَعۡلَمُ اَنَّکَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَنِصۡفَہٗ وَثُلُثَہٗ وَطَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَکَ ؕ  وَاللّٰہُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَالنَّہَارَ

নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ সালাতে দাঁড়িয়ে থাক এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপণ করেন। (সূরা মুযযাম্মিল, (৭৩), আয়াত, ২০)

শুধু তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য জাগা

পুরো রাত বা রাতের অর্ধেক অংশ না জেগে শুধু চার রাকাত বা দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরিমাণ সময়ের জন্য রাত জাগা। এটাই রাত জাগরণের সর্বনিম্ন পরিমাণ। রাত জেগে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কারো কাছে অজু করা কঠিন মনে হলে তিনি অল্প কিছু সময় জিকির আজকার করে নিতে পারেন।

যাদের জন্য রাত জেগে ইবাদত কঠিন

যদি মাঝ রাতে ওঠা কঠিন হয় তাহলে মাগরিব ও এশার মাঝের সময় এবং এশার পরবর্তী সময়কে ইবাদতের জন্য কাজে লাগানো উচিত। এ সময় নফল নামাজ, জিকির, আজকারে কাটানো উচিত। এমন ব্যক্তি রাতে ইবাদতের জন্য জাগতে পারেন না, তবে তার জন্য সুবহে সাদিকের আগে উঠা এবং ফজর নামাজ জামাতে আদায় করা জরুরি। এভাবে রাতের উভয় প্রান্তে জাগরণ ও ইবাদতের ফজিলত পাওয়া যাবে।

উসমান ইবনু আফফান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামাজ আদায়ের সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস, ২২১)

এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ২য়-খণ্ড, ১৯৪

এ জাতীয় আরো সংবাদ

তাবলিগে নিয়মিত পড়া হয় যে ৩ বই

নূর নিউজ

শয়তান দৌঁড়ে পালায় যে সময়

নূর নিউজ

হজরত উমাইমাহ বিনতে সাবিহ রা.: আবু হুরায়রা রা. এর মা

নূর নিউজ