ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কেউ যদি বলে ধর্মনিরপেক্ষতা খারাপ বা গণতন্ত্র বিপজ্জনক তা তিনি মেনে নিতে পারবেন না। তার দাবি, ভারতে ফেডারেলিজম ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি রাজ্য তাদের জিএসটি সংগ্রহের অংশ পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যদি কেউ বলে ধর্মনিরপেক্ষতা খারাপ, সাম্য অচিন্তনীয়, গণতন্ত্র বিপজ্জনক এবং ফেডারেল কাঠামো বিপর্যয়কর, তাহলে আমরা তা মেনে নিতে পারি না।’
পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি বলে যে সংবিধান পরিবর্তন করা দরকার, তবে এটি কোনও আদর্শ বা কোনও দৃষ্টিভঙ্গিকে খুশি করার জন্য (তারা বলছে)।
‘এই হাউস বিশ্বাস করে ভারতের নতুন আরেকটি সংবিধানের প্রয়োজন নেই’ শিরোনামে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ জাতীয় বিতর্কে বক্তৃতা করার সময় মমতা এসব কথা বলেন। এই বিতর্কের একটি ভিডিও তিনি শনিবার তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন।
সেখানে মমতা ব্যানার্জি প্রশ্ন করেন, ভারত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কিনা। তার মতে, ভারতীয় সংবিধানের চেতনা হচ্ছে এর প্রস্তাবনা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, গণতন্ত্র, ফেডারেলিজম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি খেয়াল রেখে খুব পরিশ্রমের সাথে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। মৌলিক অধিকার এবং দেশের সার্বভৌমত্বের মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান যদি শুধুমাত্র এজেন্সির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, এজেন্সি এবং সংস্থার জন্য, আমরা তা মেনে নিতে পারি না। সংবিধান জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য। আমার কথা বলার কোনও অধিকার নেই। আমি যদি জোর দিয়ে কোনও কথা বলি, তাহলে আগামীকাল ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) আমার বাড়িতে আসবে।’
মমতা ব্যানার্জি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলেন, তিনি রাজীব গান্ধী থেকে মনমোহন সিং পর্যন্ত বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাজ করেছেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির নাম না নিয়ে বলেন- ‘এমন ভালো প্রধানমন্ত্রী’ তিনি দেখেননি।
তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের সম্মান করে। ড. বি আর আম্বেদকর বাংলা থেকে গণপরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার আদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করেছিল, সমস্ত নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল।
মমতা বলেন, সংবিধান বিশাল এই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য জাগ্রত করার কাজ করেছে এবং প্রতিটি ভারতীয়কে আবদ্ধ করেছে। যদিও দেশের প্রয়োজনে সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে।
তার ভাষায়, ‘কিন্তু আজকাল যা ঘটছে, আমি ভয় পাচ্ছি। এটি ভয়ঙ্কর ঘটনা যা ঘটছে। একজন মানুষ হিসেবে, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারছি না।’
তিনি প্রশ্ন করেন, যদি ‘কেউ আমাদেরকে কী খাবেন, পরবেন বা কোন ভাষায় কথা বলতে হবে’ তা বলে দেন- তাহলে গণতন্ত্র এবং সংবিধানের প্রয়োজন কী?’