বিবিসিতে লেখক-সাংবাদিক মোহাম্মদ হানিফের লেখায় পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচন ও তা পরবর্তী জটিলতার নানা বিষয় উঠে এসেছে। এই মুহূর্তে দেশটির দরকার স্থিতিশীলতা। কারণ মারাত্মক মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক বিভেদ ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
তবে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সেই জটিলতা ক্রমশ বেড়েছে। কোনো দলই আত্মবিশ্বাসী নয়। বর্তমান সরকার কতোদিন টিকবে সে নিয়েও যথেষ্ট সংশয় আছে। নড়বড়ে অবস্থায় অনিশ্চয়তাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেও তারা এ সরকারের অংশ হচ্ছে না।
এবারের নির্বাচনেও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পুরনো খেলা নিয়ে হাজির ছিল। অতীতে সফলভাবে কাজে লাগা প্রতিটি কৌশলই তারা এবারও প্রয়োগ করেছে। আসল প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানকে কারারুদ্ধ করা হয়। দেড় শতাধিক ফৌজদারি ও দেওয়ানি অভিযোগে ঘিরে ফেলা হয় তাকে। তবে ইমরান একটা অভিযোগকেও স্বীকার করেননি।
নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেই সাজার খড়গ নামে। ইমরান খানকে দোষী সাবস্ত্য করে তিন মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নির্বাচনি প্রতীক নিষিদ্ধ করা হয়। পিটিআই প্রার্থীরা বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভোটে লড়েন।
পিটিআইয়ের অনেক প্রার্থীকে নির্বাচনি প্রচার ফেলে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াতে হয়। বিপরীতে ইমরান বিরোধীদের মামলা থেকে খালাস দিয়ে নির্বাচনি প্রচারে অবাধ সুযোগ দেয়া হয়।
এরপর নির্বাচনের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল সেবা বন্ধ করা হয়। নিরাপত্তা অজুহাতে দেখায় তারা। তবে ইমরান-সমর্থকদের ভোটদান বাধাগ্রস্ত করতেই এই উদ্যোগ। তারা যাতে সহজে ব্যালটে প্রার্থীদের খুঁজে না পান সে চেষ্টাও ছিল। তবে ইমরান সমর্থকরা খেলেছেন বুদ্ধির খেলা। রাতারাতি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন এবং নিজেদের প্রার্থীদের খুঁজে বের করেছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি কারাবন্দী ইমরানের বক্তব্য প্রচার করে চমক দেখায় পিটিআই। ইমরানের কয়েদি নম্বর নির্বাচনি স্লোগানে পরিণত হয়। তার অনুসারীরা গেরিলার মতো প্রচারণা চালায়, নির্বাচনের দিন চমক দেখায়।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের পরও পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা সবচেয়ে বেশি আসন পায়। ইমরানের জনপ্রিয়তার ঢেউয়ের তোড়ে কারচুপি সত্ত্বেও তাদের আটকানো যায়নি।
প্রযুক্তিবান্ধব প্রজন্মের কাছে হেরে যায় সামরিক বাহিনীর কূট কৌশল।
অনেকেরই ধারণা, পাকিস্তানের বাস্তবতায় এই কারাজীবন ইমরান খানকে আরও পরিপক্ব রাজনীতিকে পরিণত করবে। ইমরান নিজেকে আপসহীন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সামরিক বাহিনীর কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে তিনি নিজেকে নমনীয় অবস্থানে নিতে চাইবেন না। রাজনীতির পুরোনো খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে জেদ ইমরানকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করেছে।