মাদরাসার ছত্রদের ইংরেজি শেখার প্রতি দৌড় ঝাপঃ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি না তো ? 

মুফতি তাকি উসমানী

পাকিস্তান

ইদানিংকালে ইংররেজি ভাষা শেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে মাদরাসার ছাত্রদের । এটি আনন্দের বিষয় । একজন আলেমে দ্বীন এবং ইসলামের দায়ী হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি শেখা খুবই প্রয়োজন ।

কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় হল যে, একজন মেধাবী ছাত্র ইংরেজি শেখার পর তাকে দিয়ে দ্বীনের যে দাওয়াতী কাজ হওয়া দরকার ছিল তা তো দুরের কথা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সে দ্বিনের পথ থেকেই বিচ্যুত হয়ে পড়ছে । আর যারা দ্বীনের পথে থাকে এদের মধ্যেও পাশ্চাত্যের নেগেটিভ দিকগুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুনিয়ার লোভ, দুনিয়ার চাকচিক্য আর অহমিকা তাদের পেয়ে বসে। ইংরেজি শেখার পর তাকে যে সে কি ভাবে তা সে নিজেও জানে না। আকাশে যেন উড়তে থাকে । মাদরাসার খেদমত আর তার ভালো লাগে না। তার শিক্ষক ও আমাদের বযুর্গদের কোন মুল্যই তার কাছে থাকে না।

রাসুল সাঃও ভাষা শেখার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন কিন্ত তা ছিল শুধু দ্বীনের প্রয়োজনের স্বার্থে ।

في سنن أبي داود: قال زيد بن ثابت ـ رضي الله عنه: أمرني رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم فتعلمت له كتاب يهود، وقال: إني والله ما آمن يهود على كتابي، فتعلمته، فلم يمر بي إلا نصف شهر حتى حذقته، فكنت أكتب له إذا كتب وأقرأ له إذا كتب إليه

আবু দাউদ শরিফে এসেছে যায়েদ বিন সাবেত রাঃ বলেনঃ রাসুল সাঃ এর নির্দেশে আমি ইয়াহুদিদের গ্রন্থ শিখলাম। রাসুল সাঃ বলেন আল্লাহর কসম আমি আমার চিঠি-পত্রের ক্ষত্রে ইয়াহুদের বিশ্বাস করতে পারিনা, তাই আমি ( সুরয়ানী ভাষা) শিখে ফেললাম। অর্ধ মাসেই আমি তাতে দক্ষ হয়ে গেলাম । এরপর রাসুল সাঃ যখন তাদের কাছে চিঠি লিখতেন , আমিই লিখে দিতাম , রাসুল সাঃ এর কাছে চিঠি আসলে আমি পড়ে শুনাতাম।

এই হাদিস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, বিদেশী ভাষা শেখাটা দ্বীনের একান্ত প্রয়োজনের স্বার্থে ছিল , এতে পার্থিব কোন উদ্দেশ্য ছিলনা । যায়েদ রাঃ ভাষা শিখে তাদের হয়ে বা তাদের কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করেন নাই। আমাদের বড়দের মধ্যে যারা ইংরেজি ভাষা শিখেছেন তাদের উদ্দেশ্যও ছিল দ্বীনের প্রয়োজন । আল্লামা ত্বকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ এবং তাঁর মত আরও যারা আছেন তাঁরা ভাষা শিখেছেন দ্বীনের খেদমতের জন্য ।

আমার দুই যুগের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি , আমার দেখা মাদরাসার মেধাবী ছাত্র যারা ইংরেজি ভাষা শিখেছে ( আমার সহপাঠী, বন্ধু, ছাত্র ) তাদের প্রায়ই এখন মাদরাসার খেদমতে নেই । অথচ তাঁরা যদি ইলমী লাইনে, দ্বীনের পথে কাজ করত তাদের মাধ্যমে অনেক বড় খেদমত হত।

মাদরাসার এই বিশাল অঙ্গনে কত কাজ রয়েছে যাতে ইংরেজি দক্ষ লোকের প্রয়োজন । কিন্ত ইংরেজি শেখার পর দ্বীনের ফিকর , ইলমের খেদমত, দাওয়াতী কাজের মনমানসিকতা যেন বিদায় নেয়। দুনিয়ার ভোগ বিলাস, উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে জন্ম নেয়। রুহানিয়্যত, আখেরাতমূখী জীবন যাপন আর তার মধ্যে খুজে পাওয়া মুশকিল। সে তখন শুধু বড় বড় বেতনের চাকরির পিছনে দৌড়ায় । কানাআত ( অল্পে তুষ্ট থাকা) রিজিকে বরকত এই সকল কথা তখন তার কাছে খুবই বিরক্তিকর মনে হয়।

অতএব ইংরেজী শেখার উদ্দেশ্য যেন হয় দ্বীনের খেদমত , পার্থিব উপার্জন যেন মূল লক্ষ্য না হয় এ দিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ইংরেজি শেখার পর দ্বীনের খেদমতই যেন হয় আমার লক্ষ্য, মাদরাসাই যেন আমার কর্মস্থল হয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন । আমীন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

নতুন বছরে তরুণ-তরুণীদের প্রতি যে আহ্বান করলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

নূর নিউজ

নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো ঈমানহারা করার শয়তানের পুরোনো কূটচালের নবায়ন

নূর নিউজ

আফগানিস্থানে কট্টরপন্থী দমনে কেন ব্যর্থ হলো মার্কিন বাহিনী?

নূর নিউজ