আবদুল্লাহিল বাকি:
১
বাংলাদেশ ইসলামি পুস্তকাদির সাম্প্রতিক যে ধারা বহমান, বিবর্তনের কতগুলো ধাপ পেরিয়ে এই অবস্থায় এসেছে— তা অনুধাবন করতে হলে আমাদেরকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।
বর্তমানে ইসলামিক পুস্তকাদির ধারা ধীরে ধীরে নান্দনিকতা ও শৈল্পিকতার দিকে যাত্রা করছে। ঐতিহ্য থেকে আমরা কখনোই বিমুখ হতে পারি না। আমাদের বর্তমানের বলয়ে অতীতের আলোকচ্ছটা পড়েছে। এর রসদেই আমাদের ধারা ক্রমাগ্রসরমান।
মূলত বাংলাদেশে ইসলামী বই সংস্কৃতির সূচনা হয়, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগের দ্বিতীয়ভাগ থেকে। ষোল শতক থেকে নিয়ে আঠারো শতক পর্যন্ত এই ধারা বিস্তৃত। সে যুগের বই সংস্কৃতি মূলত ছিল অন্তমিলযুক্ত পুঁথি সাহিত্য। আর বইগুলো ছিল অনুবাদ-প্রবণ। পুরোপুরি অনুবাদ বলা যায় না, পুরোপুরি আবার মৌলিকও বলা যায় না। বিভিন্ন ফার্সি মহাকাব্যের অনুসরণে বাংলার আবহে তারা ঘটনা ও মিথ তুলে ধরা হতো। তাদের সাহিত্যে শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, বরং ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে যেত রূপকথা।
এ ধারায় ষোল শতকে শাহ মুহাম্মদ সগীর রচনা করেছেন ইউসুফ জোলেখা। দৌলত উজির লিখলেন লাইলি মজনু। এছাড়াও রয়েছে সৈয়দ সুলতানের সিরাত গ্রন্থ নবী বংশ, হাজী মোহাম্মদের নুরজামাল, দোনাগাজীর সইফুলমুলক বদিউজ্জামান।
সতের শতকের দিকে আলাউল বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এরমধ্যে ইসলামী ঐতিহ্য নির্ভর ছিল সেকান্দরনামা, তোহফা, সপ্তপয়কর। মুহম্মদ খান কারবালার কাহিনী নিয়ে রচনা করলেন মুক্তাল হোসেন। আব্দুল করিম রচনা করলেন দুলামজলিস। এছাড়া উল্লেখযোগ্য হল, সৈয়দ মোহাম্মদ আকবরের জেবলমূলক সামারোখ, আব্দুল হাকিমের লালমতি সয়ফুল মুলক।
সে সময় বাংলা ভাষায় গদ্যের প্রচলন না থাকার দরুন, মুসলিম জনগোষ্ঠী ফার্সি ও আরবিতে সাধারণত ধর্মীয় বিষয়গুলো পাঠ করত। বাংলা পুঁথির আম আসরে ধর্মীয় মাসলা-মাসায়েল টেনে নিয়ে আসা হতো না। কিন্তু সতের শতকের দিকে এক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন সূচিত হয়। পুঁথির ধারাকে অনুসরণ করে ফিকহকে উপস্থাপন করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রেক্ষিতেই জীবনের দৈনন্দিন মাসআলাগুলো নিয়ে মুতালিব রচনা করলেন কিফায়তুল মুসলিম। অষ্টাদশ শতকে ফিকহকেন্দ্রিক পুঁথি রচনা-ধারা আরো সম্প্রসারিত হয়। অনেকেই এভাবে পুঁথির আদলে ফিকহকে উপস্থাপন করতে থাকে। সৈয়দ নুরুদ্দিন লিখেন দাকেয়কুল হাকায়েক। মুহম্মদ আলী লিখেছিলেন হায়রাতুল ফেকাহ প্রভৃতি।
২
ভারত উপমহাদেশে উপনিবেশোত্তরকালে ট্র্যাডিশনাল মুসলিম আলেমগণ বাংলা ভাষায় লেখালেখির প্রতি আগ্রহ অনুভব করেননি। ধর্ম চর্চার জন্য উর্দু-ফার্সি-আরবীকেই উপযুক্ত মনে করেছিলেন। এসময় মুসলমানদের মধ্যে যারা বাংলা ভাষায় লেখার জন্য কলম তুলে নিয়েছিলেন, তারা প্রাথমিকভাবে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের আধুনিকতা, শিবলী নোমানীর মাতৃভাষাপ্রীতি আর জামালুদ্দীন আফগানীর প্যান ইসলামিজম চিন্তায় প্রভাবিত ছিলেন। এছাড়া তাদের চিন্তায় উপনিবেশের প্রভাব পাওয়াও কষ্টকর নয়। উনাদের মধ্যে কেউ ছিলেন পারস্যের সুফি সাহিত্য প্রভাবিত। যেমন এয়াকুব আলী খান, শেখ ফজলুল করিম। কেউ ছিলেন এর বিরোধী, নজদের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদীর দ্বারা প্রভাবিত। যেমন মৌলানা আকরাম খাঁ, আবদুল্লাহ-হেল-কাফি প্রমুখ।
সে সময় বাংলা ভাষায় যেসব ইসলামী গ্রন্থ রচিত হচ্ছিল, তা দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। ১. সৃষ্টিশীল সাহিত্য। ২. তত্ত্ব ও তথ্যনির্ভর সাহিত্য।
প্রথম ধারায় উল্লেখযোগ্য— মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু। মোহাম্মদ কাজেম আল কুরাইশীর বিরহবিলাপ, কুসুম-কানন ও শ্মশানভস্ম কাব্য। মোজাম্মেল হকের কুসুমাঞ্জলি, অপূর্ব্ব দর্শন, মুনসুর বিন হাল্লাজের জীবনের অনুসরণে মহর্ষি মনসুর প্রভৃতি।
দ্বিতীয় ধারায় উল্লেখযোগ্য হলো— শেখ আব্দুর রহিমের হজরত মহম্মদের জীবন-চরিত ও ধর্ম্মনীতি, ধর্মযুদ্ধ বা জেহাদ, ইসলাম, নামাজ তত্ত্ব, হজ বিধি। পন্ডিত রেয়াজ-অল-দীন আহমদ মাশহাদির রচিত অগ্নি-কুক্কুট, জামাল উদ্দিন আফগানিকে নিয়ে রচিত সমাজ ও সংস্কারক, প্রবন্ধ-কৌমুদী, সুরিয়া-বিজয়। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর ভারতে মুসলমান সভ্যতা, খাজা নেজামুদ্দিন আউলিয়া, তুরস্কের সুলতান, খগোলশাস্ত্রে মুসলমান ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমান। মোহাম্মদ কে. চাঁদ-এর মোসলেম জগতে বিদ্যাচর্চা। এয়াকুব আলী চৌধুরীর মানব মুকুট। টাঙ্গাইলে বসবাসকারী মোঃ নইমুদ্দিনের জোব্দাতল মসায়েল, এছবাতে আখেরজ্জোহর, আদেল্লায় হানিফিয়া, রফায়েদেন। মৌলানা আকরম খাঁর মোস্তফাচরিত প্রভৃতি।
৩
উপরে উল্লেখিত তথ্যকেন্দ্রিক ইসলামী গ্রন্থ লেখার ধারাকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় পরবর্তীতে জামাতে ইসলামের একদল লেখক। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, জুলফিকার আহমদ কিসমতী, আব্দুল মান্নান তালিব, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক আখতার ফারুক প্রমুখ।
আর এই ধারার বাইরে দেওবন্দ শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বাংলা ভাষায় রচনার সূচনা করেন শামসুল হক ফরিদপুরী। তিনি আশরাফ আলী থানবীর রহমতুল্লাহি আলাইহির অনেক বই বাংলায় অনুবাদ করেন। সাধারণ মুসলমানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় সেই বইগুলো। জনপ্রিয়তা লাভ করে প্রচুর। বিশেষত বেহেশতী জেওর, মোনাজাতে মকবুল ও খুতবাতুল আহকাম প্রভৃতি। এছাড়া তিনি মৌলিক রচনাও লিখেছেন অনেক, ইসলামের শিক্ষাকে সহজ-সরলভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য জনগণের কাছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে কওমি মাদ্রাসা থেকে কিছু মেধাবী ছাত্র বেরিয়ে আসে। লেখালেখি শুরু করে বাংলা ভাষায়। তবে শুরুর দিকে তাদের লেখালেখি ও অনুবাদের মূল কেন্দ্র ছিল— ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর অধীনে অনুবাদ ও গবেষণা করতে থাকেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ, রেজাউল করীম ইসলামাবাদী প্রমুখ। এ সময় সাধারণত ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তামূলক গ্রন্থাবলী প্রকাশিত হতো।
আশির দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসে সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী আলেম সমাজকে বাংলা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর থেকে মাদ্রাসাগুলোতে ব্যাপকভাবে বাংলা চর্চা দেখা যায়। ফলশ্রুতিতে কওমি মাদ্রাসা থেকে ইসলামি গ্রন্থ রচনার ধারা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। তারা অবশ্য সমর্থন পেয়েছিলেন মাওলানা মুহিউদ্দিন খান রহ.-এর কাছ থেকে। এর মধ্যে ছিলেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান খান নদভী, যাইনুল আবেদিন, শরীফ মুহাম্মদ, লিয়াকত আলী, নাসিম আরাফাত প্রমুখ।
তাদের তখনকার বইগুলো ছিল বেশিরভাগই অনুবাদ-প্রবণ। আর মৌলিক থাকলেও সেগুলো গবেষণামূলক ছিল না। কলকাতার আবদুল আজিজ আল আমানের কাব্যময় গদ্যের অনুসরণে ইসলামের প্রাচীন যুগের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়েছিল তাদের কিছু গ্রন্থে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য— নাসিম আরাফাতের গল্প নয় তবে, শরীফ মুহাম্মদের সবুজ গম্বুজের ছায়া, যাইনুল আবেদীন সাহেবের নীল দরিয়ার নামে প্রভৃতি।
এছাড়াও সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি ও ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের যেসব কলাম প্রকাশিত হতো— সেগুলো একত্রিত করে বই করার একটা ধারা পরিলক্ষিত হয়। যেমন যাইনুল আবেদিনের ভয় স্বপ্ন সংগ্রাম, শরীফ মুহাম্মদের সুপ্রভাত মাদ্রাসা, ইসহাক ওবায়দীর যেমন কর্ম তেমন ফল প্রভৃতি।
শুধুমাত্র ব্যাপকভাবে পাঠক বাড়ানোর চিন্তা না করে, হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন যারা— বহুল আলোচিত ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ইসলামী বিষয় নিয়ে, ট্র্যাডিশনাল চিন্তাধারায় গবেষণা করে গিয়েছেন। এ ধারায় মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, ইসহাক ফরিদী, মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব উল্লেখযোগ্য।
৪
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন জগতের বহুল ব্যবহারের দরুন— মানুষের চিন্তায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ক্রমাগত সাধারণ মানুষ কাগজের বই পাঠ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিনোদন হোক অথবা ইসলাম শিক্ষার জন্য হোক— ব্যাপকভাবে মানুষ ভিজ্যুয়াল ইমেজের দিকে ঝুঁকছে। আর সরাসরি বই পাঠের আগ্রহ যারা রাখে, তাদের অধিকাংশই ইবুক ফাইল পড়েই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে। হার্ডকপি সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছে না।
এজন্য প্রকাশনা শিল্পকে অনেক ভেবে চিন্তে পাঠকের রুচিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামনে এগুতে হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক উপযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। আগে যেখানে বই জগতে প্রবীণ লেখকদের আধিপত্য ছিল, অপরিচিত তরুণদের কোন মূল্য ছিল না— সেখানে বর্তমানে অনলাইন জগতে লেখালেখি করে পরিচিত হওয়া তরুণদেরও ভালো সাড়া মিলছে।
বর্তমানে যারা ইসলামী বই প্রকাশ করছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো ঘরানা রয়েছে। প্রত্যেকের নিজস্ব পাঠকগোষ্ঠী ও নির্দিষ্ট বইয়ের ধরণ রয়েছে। ইসলামিক বইয়ের ক্ষেত্রে, বর্তমানে অনুবাদের ধারাটা অধিক সক্রিয়। এর কারণ— যেসব ইসলামী বিষয়ে অন্যান্য ভাষায় মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে দেশী লেখকগণ নতুন ভাবে লেখার দায়ভার নিতে চান না। কারণ এসব ক্ষেত্রে লেখক নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে আগ্রহী নন। বরং ইসলামের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অধিক আগ্রহী।
আরো কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যে জনপ্রিয় ছিল মুফতি তকী উসমানী, আবুল হাসান আলী নদভী ও যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী প্রমুখের লেখা। তাদের যে গ্রন্থই প্রকাশিত হতো— বাংলাদেশে প্রায় কয়েকটি প্রকাশনীতে প্রতিযোগিতা করে অনুবাদ করা হতো। এখন অবশ্য তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি। তবে তাদের চেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আরো অনেকের লেখা। তাছাড়া আগে সাধারণত বেশিরভাগ গ্রন্থ অনূদিত হতো উর্দু থেকে। এখন দেখা যায় বেশিরভাগ গ্রন্থ অনূদিত হচ্ছে আরবী থেকে। মোটিভিশন বা কোরআন হাদিস থেকে অনুপ্রেরণামূলক যেসব বই লিখেছেন আব্দুর রহমান আরিফী, আয়েয আল কারনী, আলী তানতাবী— সেসব বই বাংলায় অনূদিত হয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে মানুষের পক্ষ থেকে।
মানুষদের মাঝে সহজভাবে ইতিহাস জানার ঝোঁক বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে একে একে অনূদিত হয়ে যাচ্ছে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রাগেব সারজানীর বইগুলো। মুহাম্মদ সাল্লাবীর বইগুলো অনূদিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। আকিদা ঈমান ও মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে সালাফি ভাবধারার প্রকাশনাগুলো প্রকাশ করছে ইবনুল জাওযী, ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়া, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে রজব হাম্বলী প্রমুখের বিভিন্ন পুস্তিকা।
ইংরেজি থেকেও বেশ কিছু গ্রন্থ বাংলায় অনূদিত হচ্ছে ইসলাম বিষয়ক। এরমধ্যে বর্তমানে বেস্ট সেলারের তালিকায় আছে— প্রখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ মোঃ ফারিসের প্রোডাক্টিভ মুসলিম; পাশ্চাত্য নিজেদেরকে সাধারণত প্রডাক্টিভ জাতি বলে থাকে। এই ধারণার বিপরীতে ইসলাম মুসলমানদেরকে যে প্রডাক্টিভিটি ও উন্নত উৎপাদনশীলতা শিক্ষা দেয়— নৈতিক সামাজিক রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে এর স্বরূপ কি, তিনি সেটা তুলে ধরেছেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছে গার্ডিয়ান প্রকাশনী থেকে। গার্ডিয়ান থেকে প্রকাশিত হয়ে আরেকটি অনূদিত বই বেস্টসেলার এ তালিকায় চলে এসেছে। হেনরি ফোর্ডের সিক্রেটস অব জায়োনিজম।
রকমারি ডটকম আমাদের সামনে যে খতিয়ান তুলে ধরেছে, তাতে দেখতে পাই— বেস্টসেলারের ক্ষেত্রে বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম স্থান অধিকারী বই একটি ইসলামিক গ্রন্থ— বেলা ফুরাবার আগে। প্রথম স্থান অধিকারী একটি ইসলামী প্রকাশনী— সমকালীন প্রকাশন। আর প্রথম স্থান অধিকারী লেখকও একজন ইসলামিক লেখক— ‘সাজিদ’ চরিত্রের নির্মাতা আরিফ আজাদ। আর জনপ্রিয় উপন্যাসিক সাদাত হোসাইন আছেন তৃতীয় স্থানে।
এ থেকে বোঝা যায়— বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামকে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে বিপুল মানুষ। কিন্তু এখনো আরো অনেক দীর্ঘ পথ বাকি আছে ইসলামী লেখকদের সামনে। ভারতে যেমন বর্তমানে শিবলী একাডেমি কাজ করে যাচ্ছে, আরবে রয়েছে এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান, কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামী লেখক ও গবেষকদের এমন কোনো অথরিটি নেই— যার অধীনে বিস্তৃতভাবে ইসলামের ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করা হবে। গ্রন্থ রচনা করা হবে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য, শিল্প সাহিত্য, ভবিষ্যৎ গঠন প্রভৃতি বিষয়ে— সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারায়। আমরা প্রার্থনা করতে পারি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমন ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রকল্প গড়ে উঠুক।