জান্নাত ও জাহান্নামের পরিচয়

পরকালে বিশ্বাস রাখা ইমানের অংশ। পরকালে রয়েছে জান্নাত ও জাহান্নাম। জান্নাতবাসীদের নিয়ামত কখনো শেষ হবে না। আর চিরস্থায়ী জাহান্নামিদের শাস্তিরও কোনো সমাপ্তি হবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একদা জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে বিবাদ হলো। জাহান্নাম বলল, আমার ভেতর উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা থাকবে। আর জান্নাত বলল, দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভেতরে বসবাস করবে। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, জান্নাত আমার রহমত, জান্নাত দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর জাহান্নাম আমার শাস্তি, জাহান্নাম দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর জান্নাত-জাহান্নাম উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। (সহিহ মুসলিম)

জান্নাত : জান্নাত অর্থ বাগান। ফারসি ভাষায় বলা হয় বেহেশত। আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের জন্য জান্নাত তৈরি করেছেন। ইসলামি পরিভাষায় আখেরাতে ইমানদার ও নেককার বান্দারের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে জান্নাত বলা হয়। জান্নাত হলো দিগন্ত বিস্তৃত নানারকম ফুলে ফুলে সুশোভিত এবং অট্টালিকা সংবলিত মনোমুগ্ধকর বাগান। যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান আছে বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝরনাধারা। যেখানে চিরবসন্ত বিরাজমান। জান্নাত চিরশান্তির জায়গা। সেখানে সবকিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে। জান্নাতে থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর। বস্তুত আনন্দ উপভোগের জন্য সবরকমের জিনিসই জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি। আর মানুষের অন্তরও কোনোদিন কল্পনা করতে পারেনি।’ (মিশকাত)

জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো। পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো। তাদের পেশাব-পায়খানা, নাকের শ্লেষ্মা ও থুতু হবে না। চিরুনি হবে সোনার, ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ, আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে, স্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনা, সবার চরিত্র হবে এক ও অভিন্ন। (সহিহ বোখারি)

জান্নাতের সংখ্যা আটটি। যথা জান্নাতুল ফেরদাউস, জান্নাতুল মাওয়া, দারুল মাকাম, দারুল কারার, দারুল নাঈম, দারুল খুলদ, দারুস সালাম ও জান্নাতু আদন। সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হলো জান্নাতুল ফেরদাউস। এর ছাদ হলো আল্লাহর আরশ।

জান্নাত লাভের উপায় : জান্নাত হলো মুমিন ও পুণ্যবানদের বাসস্থান। সুতরাং জান্নাত লাভের জন্য দুনিয়াতে সর্বপ্রথম ইমান আনতে হবে। আকাইদের সব বিষয়ের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে এবং নেক কাজ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ হলো জান্নাতের চাবি।’ অতএব নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সুন্দরভাবে আদায় করতে হবে। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানের রোজা রাখা, জাকাত আদায় এবং হজ পালন করতে হবে। জীবনের সবক্ষেত্রে মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে। অতঃপর সব অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

জাহান্নাম : জাহান্নাম হলো শাস্তির স্থান। ইসলামি পরিভাষায় আখেরাতে কাফের, মুশরেক, মুনাফেক ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে জাহান্নাম বলা হয়। জাহান্নাম খুবই কষ্টকর ও ভয়ংকর স্থান। সেখানে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেখানে পাপীদের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে এবং বড় বড় সাপ, বিচ্ছু ও কীটপতঙ্গ দংশন করবে। জাহান্নামের আগুন হবে দুনিয়ার আগুন থেকে সত্তরগুণ বেশি উত্তপ্ত। জাহান্নামবাসীর খাবার হবে কাঁটাযুক্ত লতাপাতা, যা তারা খেতে পারবে না, গলায় আটকে যাবে। অতঃপর পানীয় হিসেবে দেওয়া হবে উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। সেখানে পাপীদের মৃত্যু হবে না। বরং তারা চিরকাল শাস্তি ও কষ্ট ভোগ করতে থাকবে।

জাহান্নামিদের বর্ণনায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এতে সন্দেহ নেই, আমার নিদর্শনসমূহকে যারা অস্বীকার করবে, আমি তাদের আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ¦লে-পুড়ে যাবে তখন আবার আমি তা পাল্টে দেব অন্য চামড়া দ্বারা। যাতে তারা আজাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী। (সুরা নিসা ৫৬)

জাহান্নামের সংখ্যা মোট সাতটি। যথা জাহান্নাম, হাবিয়া, জাহিম, সাকার, সাইর, হুতামা ও লাজা।

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের উপায় : আল্লাহতায়ালা ও তার রাসুলের প্রতি যারা ইমান আনবে না তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। তাছাড়া যেসব লোক দুনিয়ায় অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করে বেড়ায় তারাও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। সুতরাং আমরা এসব কাজ থেকে বিরত থাকব। আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করব। তাহলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাব।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ইসলাম প্রচারে বণিকদের অবদান

নূর নিউজ

নামাজে ‘সুরা আলে-ইমরানের’ আয়াত পড়ায় চাকরি গেল ইমামের

নূর নিউজ

তথ্য ফাঁস করলে আল্লাহ যে শাস্তি দেবেন

নূর নিউজ