শুক্রবার সারাদিন আমল-ইবাদতে কাটাবেন যেভাবে

শুক্রবার সারাদিন আমল-ইবাদতে কাটাবেন যেভাবে
জুমার দিন উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়ালার এক অনন্য দান ও বিশেষ নেয়ামত। পূর্ববর্তী জাতিদের আল্লাহ তায়ালা সপ্তাহের একটি সর্বোত্তম নির্ধারণ করে বিশেষ ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সে দিনের প্রকৃত মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনি।

ইহুদিরা নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবারকে ইবাদতের জন্য বেছে নেয়। খৃষ্টনরা রবিবারকে। অথচ আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় সম্মানিত শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন।

জুমার দিনের অসংখ্য ফজিলত ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার অপার মেহেরবানিতে এই দিনটি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য নির্ধারণ করেছেন। এটি এমন একটি দিন, যার প্রতিটি মুহূর্ত বরকতময়, এ দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় রয়েছে। জুমার দিনকে ঘিরে মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে বিশেষ ইবাদতের সুযোগ, যেমন—জুমার নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও দরুদ পাঠ। আল্লাহ তায়ালার এই অনন্য দান ও নেয়ামতের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া এবং এ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্ধি করে সঠিকভাবে আমল করা জরুরি।

জুমার দিনের আমল

জুমার দিনের সবচেয়ে বড় আমল হল, অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে জুমার নামাজ আদায় করা। ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে পরিষ্কার ও উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে শুরু ওয়াক্তে মসজিদে চলে যাওয়া , নামাজ ও দোয়া-জিকিরে মগ্ন থাকা।

এরপর একাগ্রতার সাথে ইমাম সাহেবের খুতবা শোনা , উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় করা। এটাই হল, জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ , সর্বাধিক ফজিলতের আমল।

হাদীস শরীফে এই আমলের অনেক ফজিলতের কথা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (গোনাহের) জন্য কাফ্ফারা (পাপমোচনকারী), যদি কাবীরা গোনাহ না করা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, সাধ্যমত পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে,৬ তেল ব্যবহার করবে বা নিজের ঘরে থাকা আতর মাখবে, এরপর জুমার দিকে বের হবে, (মসজিদে গিয়ে একসাথে থাকা) দুইজনের মাঝে গিয়ে বসবে না, যত রাকাত সম্ভব নামায পড়বে, এরপর ইমাম যখন খুতবা দেন তখন চুপ থাকবে। যে কেউই এসব করবে তাকেই এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মাফ করা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৮৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৫৫৬৩)

সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোয় পরিপূর্ণ থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৭৩)

তাই ফজরের পর বা দিনের যেকোনো সময় সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা উত্তম। এটি আমাদের ঈমান মজবুত করে , দুনিয়ার ফিতনা থেকে রক্ষা করে।

ফজরের পর সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটা হৃদয় থাকে আর কুরআনের হৃদয় হল সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন একবার পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার পুরো কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন।’ (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘সূরা ইয়াসিন কোরআনের রূহ বা হৃৎপিণ্ড। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে মাগফিরাত বা ক্ষমা।

তাসবিহ ও জিকিরের অভ্যাস

আল্লাহর স্মরণ আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করে। জুমার দিন বেশি বেশি তাসবিহ ও জিকির করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করো, কারণ এ দিন আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করলে তা সরাসরি আমার কাছে পৌঁছে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

জুমার দিনে নিম্নোক্ত তাসবিহগুলো পাঠ করা উত্তম, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু’

ইশরাক ও চাশতের নামাজ আদায় করা

ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার পর ইশরাকের নামাজ পড়া , সকাল একটু বাড়লে চাশতের নামাজ আদায় করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইশরাকের নামাজ আদায় করবে, সে একটি পূর্ণ হজ ও উমরার সওয়াব লাভ করবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

আগে আগে মসজিদে গমন করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,জুমার দিনে যে ব্যক্তি সকাল সকাল মসজিদে গমন করে, তার জন্য উট কুরবানি করার সওয়াব লেখা হয়। যে ব্যক্তি কিছু দেরিতে যায়, তার জন্য গরুর কুরবানির সওয়াব লেখা হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে ভেড়া, মুরগি , ডিমের সওয়াব লেখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩) তাই জুমার দিন আগেভাগে মসজিদে গিয়ে ইবাদতে মশগুল হওয়া উত্তম।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা

জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা , সুগন্ধি ব্যবহার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা , উত্তম পোশাক পরিধান করা মু’মিনের জন্য সুন্নত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৪৬)

দোয়া কবুলের সময় অনুসন্ধান করা

জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার সব দুআ কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,জুমার দিন এমন একটি সময় আছে, তখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করে, তিনি তা কবুল করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫) এই সময়টি জুমার খুতবা ও নামাজের মধ্যবর্তী সময় বা আসরের শেষ প্রহরে হয়ে থাকে।

জুমার দিন প্রতিটি মুসলিমের জন্য ইবাদত ও আমলের বিশেষ দিন। এই মহান দিনে আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকতের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেন। আমরা প্রার্থনা করি, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে জুমার দিনটিকে যথাযথভাবে ইবাদত ও নেক আমলে কাটানোর তাওফিক দান করেন। তিনি যেন আমাদের জীবনে এ দিনের বরকতকে ছড়িয়ে দেন , আমাদের আমলগুলো কবুল করে নেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা

নূর নিউজ

আল্লামা আশরাফ আলী শিকদার রহ. এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নূর নিউজ

বিশ্বনবি সা. সকালের নাস্তায় যা খেতেন

নূর নিউজ