রোযার ৩০টি আধুনিক মাসআলা

মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল

১. ইনজেকশন : ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙবে না। তবে অনেক ডাক্তারের মতে এটা এড়িয়ে চলাই ভালো। -(জাওয়াহিরুল ফতওয়া)

২. ইনহেলার : শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
৩.এনজিও গ্রাম (অহমরড় এৎধস) : হার্ট ব্লক হলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর হার্ট পর্যন্তÍ যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিও গ্রাম। এযন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে তবুও রোযা ভাঙ্গবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)

৪. এন্ডোসকপি : চিকন পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং এটি দিয়ে মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্নয় করা হয়। এ নলে যদি কোনো ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর পানি/ঔষধ ছিটানো হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি কোনো ঔষধ লাগানো না হয় রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৫. নাইট্রোগ্লিসারিন : এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা থাকায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৬. লেপারোসকপি : শিক্ জাতীয় যন্ত্র যা দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোনো অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকলে রোযা ভেঙ্গে যাবে অন্যথায় ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৭.অক্সিজেন  : রোযা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

৮. মস্তিস্ক অপারেশন : রোযা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোযা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৯. রক্ত নেয়া বা দেয়া : রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা ভাঙ্গবে না। তাই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যাবে। তবে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া মাকরুহ যার কারণে শরীর অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখা কষ্টকর হয়। তাই দুর্বল লোকদের জন্য রোযা অবস্থায় রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। আর এমন সবল ব্যক্তি যার রোযা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোযা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না সে রক্ত দিতে পারবে। (সহিহ বুখারি)

১০. সিস্টোসকপি  : প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)

১১. প্রক্টোসকপি : পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যেন ব্যথা না পায় সে জন্য নলে গ্লিসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়, যা নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভেজা হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (ফতওয়ায়ে শামী)

১২.কপার-টি : যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে কপার-টি বলে, যাতে সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে। কপার-টি লাগিয়ে সহবাস করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে রোযার কাযা এবং কাফফারা ওয়াজিব।

১৩. সিরোদকার অপারেশন : সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংকা থাকলে জরায়ুর মুখের চারপাশে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা। এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়। যেহেতু এতে কোনো ঔষধ বা বস্তু খালি স্থানে পৌছে না। তাই দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।

১৪. ডিএন্ডসি : ডিএন্ডসি হলো ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্য উরষধঃড়ৎ এর মাধ্যমে জীবিত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি করতে হবে। (হেদায়া)

১৫. এম.আর  : এম.আর হলো গর্ভ ধারণের ৫ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম.আর সিরিঞ্জ প্রবেশ করিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রুণ বের করে নিয়ে আসা। এরপর পুনরায় ঋতু¯্রাব হয়। তাই এক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। যদি রাতের বেলা এম.আর করা হয় তাহলে দিনের রোযা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)

১৬. আলট্রাসনোগ্রাম : আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই থাকে চামড়ার উপরে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)

১৭. স্যালাইন : স্যালাইন নেয়া হয় রগে। যেহেতু রগ রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়। তাই স্যালাইন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে রোযার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেওয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম)

১৮. টিকা নেয়া : টিকা নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থানে ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়েল)

১৯. ঢুস লাগানো : ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করানো হয় তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান। (ফতওয়ায়ে শামী)

২০.ইনসুলিন গ্রহণ করা : ইনসুলিন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করানো হয় না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

২১. দাঁত তোলা : রোযা রেখে একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েয। তবে অতি প্রয়োজন না হলে তা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)

২২. পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা : রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

২৩. মিসওয়াক করা : শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। (ফতওয়ায়ে শামী)

২৪. মুখে ঔষধ ব্যবহার করা : মুখে ঔষধ ব্যবহার করে গিলে ফেললে বা ঔষধের অংশবিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (ফতওয়া শামী)

২৫. রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া : রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে বেশি পরিমাণে রক্ত দেওয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।

২৬. ডায়াবেটিসের সুগার মাপা : ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে এক ফোটা রক্ত নেওয়া হয়, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।

২৭. নাকে ঔষধ দেওয়া : নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি খাদ্য নালিতে চলে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়ায়ে রাহমানিয়া)

২৮. চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা : চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)

২৯. কানে ঔষধ প্রদান করা : কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় পানি কানে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, পানি যেন গলায় চলে না যায়। (মাকালাতুল ফিকহীয়া)

৩০. নকল দাঁত মুখে রাখা: রোযা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোযার কোন ক্ষতি হয়
না। (ইমদাদুল ফতওয়া)

লেখক : বিশিষ্ট দাঈ ও প্রিন্সিপাল, আন-নূর কালচারাল সেন্টার, নিউইয়র্ক

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও ফলমূল

নূর নিউজ

ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি নেজামে ইসলাম পার্টির

আনসারুল হক

মায়ের সেবা করলে যে পুরস্কার মিলবে

নূর নিউজ