কষ্টের সাথে অবশ্যই স্বস্তি আছে

নাজমুল হুদা মজনু


জীবনের বাঁকে বাঁকে চলতে গিয়ে অনেক কষ্টের প্রহর কাটাতে হয় মানুষকে। হাজারো সমস্যা-সঙ্কটে সয়লাব মানবজীবন। তাই কিছু লোক উট পাখির মতো মৃত্তিকায় মাথা গুঁজে পালানোর পথ খোঁজে। আর অনিশ্চিত ও ব্যর্থরাই এ কর্মের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এটি মুমিনদের স্বভাবসিদ্ধ কর্মকাণ্ড নয়। কেননা তারা বিশ্বাস করে জীবন সংগ্রামে এই চলা-বলা খুবই সীমিত সময়ের জন্য। আখেরাতের নিয়ামত‌ই আসল চাওয়া ও পাওয়ার জায়গা। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন,

আর (এ) বৈষয়িক জীবন, এ তো নিছক কিছু খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়; (মূলত) পরকালের বাড়িঘরই তাদের জন্য উৎকৃষ্ট যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে; তোমরা কি (মোটেই) অনুধাবন করো না? (আল-আনয়াম : ৩২)
অনেকসময় দেখা যায়, যারা সালাত-সিয়ামে অগ্রসর তারা অন্য যারা আমলে একটু কম তৎপর তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস এমনকি এতে অহঙ্কার‍ও প্রকাশ পায়। মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন, (হে মুহাম্মাদ,) তুমি সে (কিতাবের) মাধ্যমে সেসব লোককে পরকালের (আজাবের) ব্যাপারে সতর্ক করে দাও, যারা এ ভয় করে যে, তাদেরকে (একদিন) তাদের মালিকের সামনে একত্র করা হবে, (সেদিন) তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো সাহায্যকারী বন্ধু কিংবা কোনো সুপারিশকারী থাকবে না, আশা করা যায় (এতে করে) তারা সাবধান হবে। যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের মালিককেই ডাকে, তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের তুমি (কখনো তোমার কাছ থেকে) সরিয়ে দিয়ো না, (কারণ) তাদের কাজকর্মের (জবাবদিহিতার) দায়িত্ব (যেমন) তোমার ওপর কিছুই নেই, (তেমনি) তোমার কাজকর্মের হিসাব-কিতাবের কোনো রকম দায়িত্বও তাদের ওপর নেই, (তারপরও) যদি তুমি তাদের তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দাও, তাহলে তুমিও বাড়াবাড়ি করা লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবে। (আল-আনয়াম :
৫১-৫২)

সত্যের সন্ধানে চলার পথে দুঃখ-কষ্ট যেন অপরিহার্য অনুষঙ্গ, এক অনড় সঙ্গী; কিন্তু তাই বলে থেমে যাওয়া যাবে না। কেননা অন্ধকার অমানিশায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বয়ং তাঁর বান্দাদের আশার আলো দেখান। অতঃপর কুরআনিক বিবরণে সেই আলোকবর্তিকা প্রজ্বলন করে ১০ দিক আলোকিত করেন। আর আল্লাহ তায়ালার সাথে যার সম্পর্ক, কিছুটা বিলম্ব হলেও সাফল্য তার পদচুম্বন করবেই। তা ছাড়া বান্দাদের শাস্তি দেয়া আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য নয়; বরং তিনি অবিরাম অবাধ্যদের সংশোধনের সুযোগ দেন। এমনকি যারা বিপথগামী হয়ে পাপের পঙ্কিলতায় হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের প্রতি সদাচরণের জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশনা দিয়েছেন।

কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, সেসব লোককে তুমি (আল্লাহর বিচারের জন্য) ছেড়ে দাও, যারা তাদের দ্বীনকে নিছক খেল-তামাশায় পরিণত করে রেখেছে এবং এ পার্থিব জীবন যাদের প্রতারণার জালে আটকে রেখেছে, তুমি এ (কুরআন) দিয়ে (তাদের আমার কথা) স্মরণ করাতে থাকো, যাতে করে কেউ নিজের অর্জিত কর্মকাণ্ডের ফলে ধ্বংস হয়ে যেতে না পারে, (মহাবিচারের দিন) তার জন্য আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো সাহায্যকারী বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবে না। সে যদি নিজের সবকিছু দিয়েও দেয়, তবু তার কাছ থেকে (সে দিন তা) গ্রহণ করা হবে না; এরাই হচ্ছে সে (হতভাগ্য) মানুষ, যাদের নিজেদের অর্জিত গুনাহের কারণে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে, আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্য (আরো থাকবে) ফুটন্ত পানি ও মর্মন্তুদ শাস্তি । (সূরা আনয়াম-৭০)

মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার জীবনে নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে আরাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন, (হে মুহাম্মাদ,) আমি কি (জ্ঞান ধারণের) জন্য তোমার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিইনি? (হ্যাঁ, অতঃপর) আমিই তো তোমার (ওপর) থেকে তোমার বোঝা নামিয়ে দিয়েছি, (এমন এক বোঝা) যা তোমার পিঠ নুইয়ে দিচ্ছিল, আমিই তোমার স্মরণকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি, অতঃপর কষ্টের সাথে অবশ্যই স্বস্তি আছে; নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে আরাম; অতঃপর যখনি তুমি অবসর পাবে তখনি তুমি (ইবাদতের) পরিশ্রমে লেগে যাও, এবং সম্পূর্ণ নিজের মালিকের অভিমুখী হও।(আল-ইনশিরাহ : ১-৮)

দুনিয়া-আখেরাত শান্তি ও সুখময় করতে হলে প্রাপ্ত নিয়ামতের বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা দরকার। উচ্চাভিলাষী না হয়ে অল্পে তুষ্ট হলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া যায় পরম প্রশান্তি। প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামে দাখিল হয়েছে, যাকে প্রয়োজনীয় রিজিক দেয়া হয়েছে এবং যে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ : ৪১৩৮)

মানুষের সাফল্য লাভের জন্য ঈমান আনার পর নেক আমলের ব্যাপারে উদ্যোগী হ‌ওয়ার বিকল্প নেই। সেই সাথে শিরক-বিদাতমুক্ত নিষ্কলুষ জিন্দেগি যাপন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে কাউকে শরিক করা হলো বড় জুলুম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা তাদের ঈমানকে জুলুমের (কালিমা) দিয়ে কলুষিত করেনি, তারাই (হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতে) নিরাপত্তা লাভের বেশি অধিকারী, (মূলত) তারাই হচ্ছে হেদায়াতপ্রাপ্ত । (আল-আনয়াম : ৮২)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ঋণ পরিশোধকালে যে দোয়া পড়তেন নবীজি

নূর নিউজ

সকাল-সন্ধ্যায় আসমানি সুরক্ষা লাভের দোয়া ও আমল

নূর নিউজ

নবিজির শহর মদিনা

নূর নিউজ