উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও আইনসভার ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত রায়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতা দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। তবে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) রাতে পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের রায়ে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
এদিন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সুপ্রিম কোর্ট পাঞ্জাবের ডেপুটি স্পিকারের সেই বিতর্কিত রায়কে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে। আর এতেই জনসংখ্যায় পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ এই প্রদেশটির মসনদের দখল ফিরে পেয়েছে ইমরানের পিটিআই। বুধবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী পারভেজ ইলাহীকে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ছেলে হামজা শেহবাজ তার পদ হারিয়েছেন।
দ্য ডন বলছে, মঙ্গলবার রাতে শীর্ষ আদালতের এমন সিদ্ধান্তের পর বুধবার সকালেই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পারভেজ ইলাহী। এদিন সকালে রাজধানী ইসলামাবাদের আইওয়ান-ই-সদরে ইলাহীকে শপথবাক্য পাঠ করান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভী।
অবশ্য এর আগে আদালতের রায়ের পরও ইলাহীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করাতে অস্বীকার করেন পাঞ্জাবের গভর্নর বালিঘুর রেহমান। আর এরপরই শপথ গ্রহণ করতে লাহোর থেকে কেন্দ্রীয় রাজধানীতে ছুটে যান চৌধুরী পারভেজ ইলাহী।
এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল, বিচারপতি ইজাজ-উল-আহসান এবং বিচারপতি মুনিব আখতারকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মামলার রায় ঘোষণা করে জানায়, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর হামজা শেহবাজ নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চৌধুরী পারভেজ ইলাহীই পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
এসময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে ইলাহীর শপথের ব্যবস্থা করার জন্য পাঞ্জাবের গভর্নরকেও নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে প্রয়োজনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভীকে হস্তক্ষেপ করতে ‘পরামর্শ’ দেয় তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চ।
তবে আদালতের রায়ের পরও ইলাহীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করাতে অস্বীকার করায় বুধবার সকালে চৌধুরী পারভেজ ইলাহীকে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ পাঠ করান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের এই রায় হামজা শেহবাজের বাবা তথা পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কাছে বড় এক ধাক্কা। পিএমএল (এন)-এর প্রধান সহযোগী ‘পাকিস্তান পিললস পার্টি’ (পিপিপি)-র প্রধান তথা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিও এর ফলে অস্বস্তিতে পড়লেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৩৭১ সদস্যের পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় শুক্রবার ভোটাভুটিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফে ছেলে হামজা শেহবাজ পেয়েছিলেন ১৭৯ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই নেতা ইলাহী পেয়েছিলেন ১৮৬ ভোট।
কিন্তু আইনসভার ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি পাকিস্তান মুসলিম লীগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ)-এর ১০টি ভোট অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর তিনি হামজাকে তিন ভোটে জয়ী ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্টে ডেপুটি স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল ইমরানের দল।
সম্প্রতি পাঞ্জাব প্রদেশের আইনসভার ২০টি আসনের উপনির্বাচনে ১৫টিতেই জয় পেয়েছিল ইমরানের দল পিটিআই। সেখানে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় থেকেও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএল (এন) জেতে মাত্র চারটিতে! একটিতে জিতেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এর ফলে পাঞ্জাব আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পায় ইমরানের পিটিআই। দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডেকে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের নির্দেশ দেয় লাহোর হাইকোর্টও।
প্রসঙ্গত, পাঞ্জাবের আইনসভার ওই ২০টি আসন ছিল ইমরানের পিটিআইয়ের দখলেই। কিন্তু গত মার্চে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের পাশাপাশি পাঞ্জাব আইনসভাতেও ইমরানের দলে ভাঙন দেখা দেয়। বিদ্রোহীরা শরীফদের সঙ্গে হাত মেলানোয় মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারাতে হয় পিটিআই নেতা উসমান বুজদারকে।
পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন হামজা শেহবাজ। কিন্তু এরপর ইমরানের আবেদন মেনে নিয়ে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন দলত্যাগী সদস্যদের বরখাস্ত করে উপনির্বাচন ঘোষণা করেছিল। আর সেখানেই বাজিমাত করে পাঞ্জাবের মসনদ ফের দখলে নিলেন ইমরান খান।