অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় নিউইয়র্কে থাকতে চান না কর্মজীবীরা

অপরাধ, নোংরা পরিবেশ, পাবলিক ট্রানজিটে গৃহহীনদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিউইয়র্কে বসবাস করা অনুপোযুগী মনে করছেন এখন নগরবাসী।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, নিউইয়র্ক নগরের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে কর্মীদের বড় একটি অংশ অফিসে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

নগরের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনে বসবাসকারী চল্লিশ শতাংশ ও বোরোর ৪৮ শতাংশ চাকরিজীবী মানুষ ভাবছেন শহর থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার। এর মূল কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন জননিরাপত্তা ও কোভিড-১৯ । যারা ঘরে বসে কাজ করছেন , এদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ মনে করেন জননিরাপত্তা ও ২৭ শতাংশ কোভিড উদ্বেগ। ব্যবসা গ্ৰুপের তথ্য অনুসারে, মাত্র ৪০ শতাংশ কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে অফিস করেছন।

এদিকে পাবলিক ট্রানজিট যাত্রীদের ৭৪ শতাংশ বলেছেন, দুই বছর আগে করোনভাইরাস মহামাররি শুরু হওয়ার পর থেকে সাবওয়ের নিরাপত্তা আরও খারাপ হয়েছে।

৯৪ শতাংশ কর্মচারী বলেছেন, গৃহহীনদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং এই সমস্যা সমাধান মোকাবিলায় যথেষ্ট কাজ করা হচ্ছে না।যার কারণে ৮২ শতাংশ মনে করছেন, এই সমস্যাগুলোর কারণে জনদুর্ভোগ ও নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এছাড়া জরিপে ৮৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নরকে পৌঁছেছে। ৮৫ শতাংশ কর্মী বলেছেন, অপরাধ মোকাবিলায় যথেষ্ট কাজ করা হয়নি, ৭৭ শতাংশের ধারণা বন্দুক সহিংসতা নেই কোন সমাধান, ৫৭ শতাংশ দোকানপাট লুটপাট ও ৪৬ শতাংশ অপরাধমূলক ঘটনায় আইনে প্রয়োগের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন।

জরিপে ৯ হাজার ৩৮৬ জনের মধ্যে নগরের শুধুমাত্র ৩৮ শতাংশ কর্মচারী ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী।তবে ৬২ শতাংশ মানুষ নিউইয়র্ক ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চিত।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ, ক্যাশবন্ড ছাড়া জামিন…

নিউইয়র্কের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাশবন্ড ছাড়াই জামিন প্রদান নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। ক্যাশবন্ড ছাড়াই জামিন প্রদানের বিরোধিতা করছেন নগরের মেয়র এরিক অ্যাডামস। এর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন স্টেট গর্ভনর ক্যাথি হোকুল। দুজনই নিউইয়র্ক নগরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া। তাদের পাশে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।এরপরও নগরে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থামানো যাচ্ছে না।

সাবওয়ে, দোকানপাট থেকে শুরু করে রাস্তায় দিনদুপুরে গুলি করে মানুষ হত্যা এখন নিয়মিত ঘটনা। এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সামনে এসেছে ‘ক্যাশবন্ডবিহীন বেইল’ সিস্টেম। সাবেক গর্ভনর এন্ড্রু ক্যুমো ও বিল ডি ব্লাজিও’র আমলে এই আইনটি স্টেট আইন সভায় পাস হয়। যা ‘বেইল রিফর্ম বিল’ নামে পরিচিত। এতে বন্ড ছাড়াই অপরাধীরা গ্রেফতার হবার পর সহজেই জামিন নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসে এবং আবারও জড়িয়ে পড়ে অপরাধে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক নগরের অপরাধ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস বেইল রিফর্ম বিল বাতিলের প্রস্তাব করেন। গত মঙ্গলবার স্টেট গর্ভনরও একই সুরে বিলটি আবারও সংস্কার বা বাতিলের পক্ষে কথা বলেছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের শতকরা ৬৫ ভাগ জনগোষ্ঠী বেইল রিফর্ম বিল বাতিলের পক্ষে। বিলটি বাতিল করে ক্যাশবন্ড জামিন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে স্টেটের উভয় চেম্বারে নতুন একটি বিল আনতে হবে।

গর্ভনর ক্যাথি হোকুল আইনটি সংস্কারে ১০টি প্রস্তাবনা এনেছেন। এর অন্যতম হলো ক্যাশবন্ডে জামিন।

এদিকে নিউইয়র্ক নগরের কম্পট্রোলার ব্রাড ল্যান্ডার দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, বিনা বন্ডে জামিনের সাথে আইনশৃঙ্খলা অবনতির কোন সম্পর্ক নেই। বিনা বন্ডে জামিন নিয়ে এসে অপরাধ করছে এমন হার মাত্র ৪ ভাগ। যা আগেও এমনই ছিল। ঘাটতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও সামাজিক ইস্যুগুলো। এগুলোর নিস্পত্তি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

এছাড়া নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অপরাধ কমাতে মেয়র পুলিশ ড্রোন ব্যবহার করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কে এই জো বাইডেন?

আনসারুল হক

২৪ রুশ কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ

আনসারুল হক

ইউক্রেনের প্রবাসী বাংলাদেশীরা কোথায়?

নূর নিউজ