প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আসলে কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব যেন সুরক্ষিত থাকে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি। আর সেই কারণে আমরা আমাদের নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে সার্বিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছি, যেন আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্পন্ন ও দক্ষ হয়ে ওঠে। সেদিকে আমরা বিশেষ ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি।
বুধবার নৌবাহিনীর নবনির্মিত ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা, ৪১ পিসিএস-এর চারটি জাহাজ এবং চারটি এলসিইউ-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আয়োজিত এ কমিশনিং অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক। আমাদের নৌবাহিনীর প্রয়োজন আমাদের রক্ষা করার জন্য, সাইক্লোন মোকাবিলা করবার জন্য। আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার।
নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবহরে এভিয়েশন ও সাবমেরিন সংযোজন করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিশ্ব দরবারে আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, গড়ে তোলা হয়েছে হেলিকপ্টার ও টহল বিমান সমৃদ্ধ নেভাল এভিয়েশন এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস। সমুদ্রে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে হেলিকপ্টার ছাড়াও একাধিক যুদ্ধ জাহাজ এবং সরঞ্জামাদি ক্রয় ও নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নিজেদের জাহাজ তৈরির সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা নিজেদের জাহাজ নিজেরা তৈরি করতে পেরেছি। আমরা চাই আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাক। আমাদের নৌবাহিনী এখন অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘বায়ার নেভি’ (ক্রেতা) থেকে ‘বিল্ডার নেভি’তে (নির্মাতা) পরিণত হয়েছে।
বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর আটটি জাহাজের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই ঘাঁটি এবং জাহাজসমূহ নিজ নিজ অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা, দেশি-বিদেশি জাহাজসমূহ নিরাপদে সমুদ্রপথে চলাচল, উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান প্রতিরোধ, অনুপ্রবেশের মাধ্যমে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধ এবং বিভিন্ন দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
দেশ-বিদেশে নৌবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের নৌবাহিনী শুধু দেশে না, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও সুনাম অর্জন করছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের আওতায় সফলভাবে নিয়োজিত থেকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে।
বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এটুকু দাবি করতে পারি, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর এই ২০২৩; আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ। সেভাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শামিল থেকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।
এই কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটির বেইজ কমান্ডার এবং সংশ্লিষ্ট জাহাজের কমান্ডারদের হাতে ‘কমিশনিং ফরমান’ তুলে দেন।
বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর আটটি জাহাজের ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টরি (তথ্যচিত্র) প্রদর্শন করা হয়।