আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বর্ণাঢ্য জীবন

বিশেষ প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর সাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (১০৩) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গতকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। আজ শনিবার বাদ জোহর তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংস্থা।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। দেশের কওমি মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। দেশ-বিদেশে তাঁর লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে। তিনি ইসলামের কল্যাণ ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সদা সোচ্চার ছিলেন। অর্জন করেছিলেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

জনা গেছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। ছাত্র আন্দোলনের মুখে সদ্য তিনি হাটহাজারী মাদরাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত হন।

আল্লাশা শাহ্ আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৪১ সালে চলে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ এবং তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত হন।

ভারত থেকে দেশে ফিরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। এ মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল তার ছাত্র। সবার কাছেই তিনি ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিতি পান। দেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটাহাজারী মাদ্রাসাটি আল্লামা শফীর কারণে বেশ আলোচিত ছিল।

আল্লামা আহমদ শফী ছিলেন ঊর্দু, ফার্সি, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় একজন সুদক্ষ প-িত। তিনি বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বইয়ের রচয়িতা। তিনি দেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর সভাপতি পদে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আসীন ছিলেন।

দেশের প্রবীণ কওমি আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বেই প্রায় একযুগ আগে গঠিত হয়েছিল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই আল্লামা আহমদ শফী সংগঠনটির আমীরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৩ সালের ৫ ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও সমাবেশের কর্মসূচির পর ব্যাপকভাবে দেশে ও দেশের বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হন আহমদ শফী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এমএ (আরবি-ইসলামিক স্টাডিজ)-এর সমমান ঘোষণা করেন।

তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ‌তার কয়েক হাজার খলীফা রয়েছে। মুরিদ ও ভক্তের সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

বরিশালে আশাবাদী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ?

নূর নিউজ

রেমিট্যান্সে গতি, ৯ দিনে এলো ৬৩ কোটি ডলারের বেশি

নূর নিউজ

প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ

নূর নিউজ