আল্লাহর স্মরণে শয়তান পালায়

আল্লাহ তায়ালার দেয়া হাজারো নিয়ামতে পূর্ণ এ পৃথিবীতে বেশুমার ভোগ করেও বান্দা বড়ই অকৃতজ্ঞ ও প্রশংসা জ্ঞাপনে মারাত্মক কৃপণ। তারপরও মহান রাব্বুল আলামিন সহজে বান্দার প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ করেন না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ করে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী,) তুমি (এদের) বলে দাও (হ্যাঁ), তিনিই তোমাদের পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (শােনার ও দেখার জন্য) কান এবং চোখ দিয়েছেন, আরাে দিয়েছেন (চিন্তা করার মতাে) একটি অন্তর; কিন্তু তোমরা খুব কমই (এসব দানের) কৃতজ্ঞতা আদায় করাে।(আল-মুলক-২৩)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অশেষ দয়া ও মায়ামাখা কণ্ঠে বলেন, (হে নবী) তুমি এদের বলো আমার মালিকের (প্রশংসার) কথাগুলো (লিপিবদ্ধ করার) জন্য যদি সমুদ্র কালি হয়ে যায় তাহলে আমার মালিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র শুকিয়ে যাবে এমনকি যদি আমি তার মতো আরেক সমুদ্রকে (লেখার কালি করে) সাহায্য করার জন্য নিয়ে আসি তবুও। (কাহাফ-৯)

মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত ও সঙ্কীর্ণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসার বিস্তৃতির চিত্রটি মূর্ত করে তুলে ধরার জন্য পবিত্র কুরআনের নিজস্ব বর্ণনাভঙ্গিতে এভাবে বলা হয়েছে, সমুদ্রের মতো গভীর এবং বিশাল আর কী হতে পারে। মানুষ তাে কালির সাহায্যেই লিখে থাকে। এই সামান্য ও নগণ্য পরিমাণের কালির সাহায্যে যে জ্ঞান সংরক্ষণ করা হয় তা কি সত্যিই গভীর ও বিশাল হতে পারে? অপর দিকে আল্লাহর জ্ঞানের বিশালতার ব্যাপারটি অনুমান করার জন্য সমুদ্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহর জানা বিষয়গুলাে যদি কেউ লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বিশাল ও গভীর সমুদ্রের পানিকে কালি হিসেবে ব্যবহার করে তাহলেও তা লিখে শেষ করা যাবে না এমনকি একের পর এক সমুদ্র শেষ হতে থাকবে; কিন্তু আল্লাহর কথা ও বক্তব্য শেষ হবে না। এই চাক্ষুষ এবং প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অসীম এবং সসীমের ধারণা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে এ কথাও বুঝানাে হয়েছে যে, সসীম বাহ্যিকভাবে যতই বিশাল মনে হােক, যতই বিস্তৃত মনে হােক অসীমের তুলনায় তা সবসময়ই নগণ্য ও সঙ্কীর্ণ।

মানুষ সীমিত জ্ঞানের অধিকারী বলেই অদৃশ্য, পরােক্ষ ও বিমূর্ত যেকোনাে বিষয় অনুধাবন করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এর জন্য তার প্রয়ােজন হয় চাক্ষুষ দৃষ্টান্তের, দৃশ্যমান অস্তিত্বের অথচ ওই সব বিষয়ের পরিধি হচ্ছে অত্যন্ত সীমিত। যদি তাই হয়, তাহলে অনন্ত ও অসীম তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি অনুধাবন করতে গিয়ে তার কী অবস্থা দাঁড়াবে? এ জন্যই পবিত্র কুরআন এসব জটিল বিষয় সুন্দর ও সুস্পষ্টভাবে বোঝানাের জন্য নানা ধরনের দৃষ্টান্ত ও উপমা পেশ করে থাকে। (তাফসির ফি জিলালিল কুর‌আন)

আল্লাহ তায়ালা নিজের একত্বের ব্যাপারে একদম আপসহীন। তার কোনো শরিক করার কারো কোনো সুযোগ নেই। তার নৈকট্য পেতে হলে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। তাই তো আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(হে নবী) তুমি (এদের) বলো আমি তো তোমাদের মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ তবে আমার ওপর ওহি নাজিল হয় আর সেই ওহির মূল কথা হচ্ছে তোমাদের মাবুদ হচ্ছে একজন অতএব তোমাদের মাঝে কেউ তার মালিকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন (হামেশা) নেক আমল করে, সে যেন কখনো তার মালিকের এবাদতে অন্যকে শারিক না করে। (সূরা মুমিনিন-১০)

মুমিনের আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে— আল্লাহ তায়ালা বান্দার মনের মর্মকথা শোনেন ও জানেন; তার প্রকাশ্য-গোপন সব আশা-আকাঙ্ক্ষা তিনি অবগত। তাই কে কোন উদ্দেশ্যে তাঁকে ডাকে তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। মুমিনের মূল মাকসুদ হতে হবে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ গন্তব্যের পরম পথপ্রদর্শক। এখানে ফাঁকিবাজির কোনো সুযোগ নেই।

উমার ইবনু খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত— তিনি

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিয়্যতের ওপরেই কাজের ফলাফল নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। কাজেই যার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের জন্যই। আর যার হিজরত পার্থিব লাভের জন্য অথবা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরতের ফল সেটিই, যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। (বুখারি-৫০৭০)

অনেকসময় দেখা যায় কিছু লোক এবাদতের ব্যাপারে আত্মপ্রতারণার শিকার হয়। তারা বলে, ‘আগে ঈমান ঠিক হোক পরে নামাজ।’ এরা বোঝে না যে, নামাজ কায়েমের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হয়। আর নামাজ ছেড়ে দিলে তার ঈমান‌ও একদিন তাকে ছেড়ে চলে যায়। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ গভীর হয় আর আল্লাহর স্মরণে শয়তান পালায়। তাই বিনম্র চিত্তে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। আন্তরিকতার সাথে নামাজ কায়েম করলে খাঁটি ঈমান অর্জিত হয় এবং বিশুদ্ধ ঈমান জান্নাতের সার্টিফিকেট। এ বিষয়ে এক হাদিসে

মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যেকোনো ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, সে খাঁটি অন্তরে এই সাক্ষ্য দেবে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’- আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। ( মুসনাদে আহমাদ-২১৯৯৮)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

কোন সদকার সওয়াব বেশি?

নূর নিউজ

রমজানে আল্লাহভীতি অর্জনের উপায়

আনসারুল হক

ড. আলী আল সালুসের ইন্তেকালে আল নূর কালচারাল সেন্টারের গভীর শোক

নূর নিউজ