ইতিকাফ কেন করব, কীভাবে করব

মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল

রমাদান মাস আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও পাপমোচনের অবারিত সুযোগ। এ মাসের শেষ ১০ দিন সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সময়। এ সময় ইতিকাফ বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমাদানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসূল (সা.) ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম)

ইতিকাফের পরিচয় : ইতিকাফ আরবি শব্দ, যার অর্থ অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিছিন্ন হয়ে বিশেষ সময়ে ও বিশেষ নিয়মে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলে।

ইতিকাফের প্রকারভেদ : ইতিকাফ তিন প্রকার-

এক. সুন্নাত ইতিকাফ : রমাদানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমাদানের সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্তÍ মসজিদে অবস্থান করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

দুই. ওয়াজিব ইতিকাফ : নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে আমার অমুক কাজ সমাধান হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি একদিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে, তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত।

তিন. নফল ইতিকাফ : সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করাকে নফল ইতিকাফ বলে। এর জন্য কোনো দিন কিংবা সময় নির্ধারিত নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা উত্তম।

ইতিকাফের স্থান : ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো পবিত্র মসজিদুল হারাম। এরপর মসজিদে নববী। এরপর যথাক্রমে বাইতুল মাকদিস, জুমা আদায়ের মসজিদ ও মহল্লার মসজিদে। নারীদের মসজিদের বদলে ঘরে ইতিকাফ করা উত্তম। ঘরের নির্দিষ্ট নামাযের স্থানে তারা ইতিকাফ করতে পারে।

ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় : ১. বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা, ২. কুরআন তিলাওয়াত করা, ৩. দ্বীনি আলোচনা করা ও শোনা, ৪. আল্লাহর জিকির করা, ৫. দুআ করা, ৬. ধর্মীয় বিতাবাদি পাঠ করা।

ইতিকাফে যা বর্জনীয় : ১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা, ২. ঝগড়া বা অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৩. গিবত বা পরনিন্দা করা, ৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচাকেনা করা।

যেসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যায় : ১. বৈধ প্রয়োজনে বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. শরিয়ত অনুমোদিত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ : ১. মসজিদে পানাহার করা, ২. পেশাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া, ৩. ফরয গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া, ৪. জুমার নামাযের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া, যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার আগে দুই/চার রাকাত সুন্নাত আদায় করতে পারে, ৫. আজান দেওয়ার জন্য বাইরে যাওয়া।

একটি প্রচলিত ভুল : শরিয়ত মতে, পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো যায় না। কিছু এলাকায় দেখা যায়, রমাদানের শেষ ১০ দিনে এলাকার কেউ ইতিকাফ না করলে কোনো ব্যক্তিকে খাবার ও পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো হয়। কিন্তু এ নিয়মে ইতিকাফ করানো শুদ্ধ নয়। ইতিকাফ অবিনিময়যোগ্য একটি ইবাদত। তাই ইতিকাফের জন্য বিনিময় নেওয়াও জায়েয নেই।

লেখক : বিশিষ্ট দাঈ ও প্রিন্সিপাল, আন-নূর কালচারাল সেন্টার, নিউইয়র্ক

এ জাতীয় আরো সংবাদ

জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় -এর বার্ষিক মাহফিল আগামী সোমবার

নূর নিউজ

নামাজের বিরতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় যাত্রীকে গ্রীনলাইনে না উঠার আহ্বান

নূর নিউজ

জুমার দিন যে সুরা পাঠে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি মিলবে

নূর নিউজ