যখনই ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ঠিক, তখনই বিশ্ব রাজনীতির আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক দল হামাস। পরাশক্তি ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে একমাত্র সংগঠন যেটি কিনা ইহুদিদের হাত থেকে জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনকে রক্ষা করার জন্য মরণপণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে ইসরাইলি আগ্রাসনের শক্তিশালী জবাব দেয়ারও চেষ্টা করছে। এবং ক্রমেই তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করছে।
হামাস শব্দটি আরবি। যার অর্থ উৎসাহ বা উদ্দিপনা।
সংগঠনটির পুরো নাম “হারাকাত আল মুকাওয়ামা আল ইসলামিয়া”। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন।
ইহুদীরা যখন ধীরে ধীরে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলে নিয়েছিল, তখন ১৯৮৭ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিন, আব্দুল আজিজ, মাহমুদ জাহার ও হাসান ইউসুফের মত প্রসিদ্ধ ইসলামিক নেতাদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে হামাস। সংগঠনটি ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামের মতাদর্শ লালন করে।
ফিলিস্তিনে দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটি হামাস। অন্যটির নাম ফাতাহ। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত সমরবিদ ইয়াসির আরাফাত। ২০০৪ সালে ফাতার নেতা ইয়াসির আরাফাত মৃত্যুবরণ করলে ফিলিস্তিনি এ দুই সংগঠনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস জয়ী হওয়ার পর সেই সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
বিশ্বের পরাশক্তিগুলো অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা কোনোভাবেই চাচ্ছিল না নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করুক। হামাস যেন পরাজিত হয় সেজন্য ফিলিস্তিনি জনগণকে ভোট না দিতে চোখ রাঙ্গানি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন এসব রাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। কিন্তু ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও আমেরিকার সিআইএ যারপরনাই ষড়যন্ত্র করেও হামাসের বিজয় ঠেকাতে পারেনি।
এরপর আমেরিকা, ইইউ, কানাডা ও ইসরাইল এক হয়ে বিরোধীদের দুর্বল করার প্রধান অস্ত্র অর্থাৎ জঙ্গী ট্যাগ লেপ্টে দেয় হামাসের গায়ে। যার ফলে এসব রাষ্ট্রের মিত্রদের কাছে হামাস নিসিদ্ধ সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়।
তবে রাসিয়া, তুরস্ক, ইরান ও চীন হামাসকে নিসিদ্ধ সংগঠনের তালিকায় স্থান দেয়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাসিয়া ও চীনের এই সিদ্ধান্ত কেবলই আমেরিকার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধীতা।
ফিলিস্তিনি জনগণ ঠিকই বুঝতে পেরেছিল কোন দল নির্বাচনে জয়লাভ করলে তাদের নিরাপত্তা ও স্বার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের বিষয়ে বেশি লক্ষ্য রাখবে। তাই সংখ্যা ঘরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় বসে হামাস।
এরপর থেকেই ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। অবৈধ দখলদারিত্বের সীমানা প্রাচীর দীর্ঘ করে মুসলমানদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষি জমি তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করতে থাকে। সেই ধারাবাহিকতা আজও চলমান।
হামাস সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও নির্যাতন ও দখলদারিত্ব ঠেকাতে পারছে না। কারণ উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের একাই লড়তে হচ্ছে।
আমেরিকার দাসত্ব বরণ করা ও ইসরাইলের কাছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে হেরে যাওয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও এধরনের সম্পদশালী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে বহু আগ থেকেই।
নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের উপর যখন অত্যাচার খুব বেশি বেড়ে যায়, তখন শুধুমাত্র একটি কাগুজে প্রতিবাদ বা বিবৃতি পর্যন্ত সিমাবদ্ধ থাকে এসব রাষ্ট্র।
মুসলিম বিশ্বের পরোক্ষ সহযোগিতা না পেয়ে এবং ইসরায়েলের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হামাস কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি হামাসের মূল নেতৃত্বেই সশস্ত্র শাখা গঠন করে। সেই ইউনিটের নাম “ইজ্ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড”।
বিশেষ প্রয়োজনে গঠন করা এই ইউনিট এখন সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আত্যাধুনিক রকেট, মিসাইল ও আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করছে। যদিও বিশাল হাঙড়ের মুখের সামনে এসব অস্ত্র চুনোপুঁটির সমতূল্য।
লেখক: বিন ইয়ামিন, গণমাধ্যমকর্মী