ওয়াজ-নসিহত দ্বীনী দাওয়াতের অন্যতম একটি অংশ

গুলিস্থানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতীব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুতবায় বলেন, ওয়াজ অর্থ উপদেশ, নসিহত, বক্তব্য। যিনি ওয়াজ করেন তাকে ওয়ায়েজ বা বক্তা বলে। ওয়াজ-নসিহত বা উপদেশ দ্বীনী দাওয়াতের অন্যতম একটি অংশ। এটি মানব সমাজের উন্নতি ও সংশোধনের অতুলনীয় পন্থা। ইসলামের শুরু থেকেই এর পবিত্র ধারা অদ্যাবধি চলে আসছে।

মহান আল্লাহ হলেন প্রথম ওয়ায়েজ বা ওয়াজকারী। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সকল নবী-রাসূল ছিলেন ওয়ায়েজ। এই সূত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তরাধিকারীরা ওয়ায়েজিন। এই উম্মতের দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করবেন ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া তথা নবীদের উত্তরাধিকারী উলামায়ে কিরাম। আর উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব হলো এই দাওয়াতি কাজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখা। ওয়াজ, নসিহত, বয়ান, খুতবা, তাফসির ইত্যাদি দাওয়াতের প্রচলিত মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’’ [সূরা নাহল : ১২৫]

দাওয়াতি আলোচনার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। যেমন : ওয়াজ, নসিহত, বয়ান, খুতবা, তাফসির ইত্যাদি। ‘ওয়াজ’ হলো সুন্দর, আকর্ষণীয়, যুক্তিপূর্ণ ও হৃদয়স্পর্শী আবেদনময় আলোচনা।

 

ইমাম গাজ্জালী রাহ. তার লিখিত গ্রন্থ “আইয়্যুহাল ওয়ালাদ” নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ওয়াজকারীদের ওয়াজ দ্বারা উদ্দেশ্য যেন হয় মানুষকে দুনিয়া হতে আখিরাতের প্রতি, গোনাহ থেকে নেকির প্রতি, লোভ থেকে পরিতুষ্টির প্রতি আহ্বান করা। এরই ভিত্তিতে বক্তাগণ শ্রুতাদেরকে পরকালমুখী ও দুনিয়াবিমুখ করে গড়ে তোলার প্রয়াস করা, ইবাদত-বন্দেগী ও তাকওয়ার দীক্ষা দান করা, সর্বোপরি আত্মিক অবস্থা পরিবর্তন সাধনা করা। এটাই হলো প্রকৃত ওয়াজ। আর যে বক্তা এরূপ উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে ওয়াজ করবে, তার ওয়াজ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দ্বীনদার মুসলমানগণ যেন এ রকম বক্তা ও ওয়াজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে। [মাজালিসূল আবরারর : ৪৮২]

 

ওয়ায়েজিনদের পর্যাপ্ত শিক্ষাগত ইলমি যোগ্যতা থাকা, অবয়ব সুরত সুন্নাত মুতাবিক হওয়া, আখলাক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে আদর্শিত হওয়া, তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকি হওয়া, ইখলাসওয়ালা মুখলিস হওয়া, তাওয়াক্কুল-আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা থাকা, ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হওয়া, কপটতামুক্ত সরলমনা হওয়া, বিনয়ী হওয়া, সুমিষ্টভাষী হওয়া, ভদ্র ও মার্জিত রুচিসম্মত হওয়া, দূরদর্শী হওয়া, সব বিষয়ে মতামত না দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য না করা, নিজের বিদ্যা ও পান্ডিত্য জাহির না করা, হিকমতের সঙ্গে কথা বলা, প্রয়োজনমতো কুরআনের আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করা, সহীহ কাহিনী বলা, উদ্ধৃতি যেন নির্ভুল হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা, শব্দ-বাক্য ও উচ্চারণ শুদ্ধ হওয়া, তাজবিদসহ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করা, গ্রামারসহ আরবি পাঠ করা, কথায় ও কাজে মিল থাকা, উম্মতের ইসলাহ তথা সংশোধন ও কল্যাণকামিতার মনোভাব থাকা, ইতিবাচক কথা ও আশার বাণী শোনানো এবং নিয়ত সহীহ থাকা।

 

আল্লাহ সকল দ্বীনের দাঈকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমীন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

রাসূল সা. এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে

নূর নিউজ

মুফতি জুবায়েরের সন্ধান চেয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

নূর নিউজ

“২০২১-এ যেসব দেশবরেণ্য আলেমদের হারিয়েছি আমরা”

নূর নিউজ