কুদৃষ্টি যেভাবে মানুষের ক্ষতি করে

মানুষের চোখ লাগা (কুদৃষ্টি) এবং এর ফলে অন্য মানুষ বা জন্তু-জানোয়ারের ক্ষতি হওয়া সত্য। এটা মূর্খতাসুলভ কুসংস্কার নয়। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘কাফিররা যখন কোরআন শোনে, তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়িয়ে ফেলবে…।’ (সুরা : ক্বলম, আয়াত : ৫১)

রাসুলুল্লাহ (সা.)ও বদনজরের প্রভাবকে সত্য বলে উল্লেখ করেছেন। এক হাদিসে এসেছে : ‘অশুভ দৃষ্টির প্রভাব সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্যের লিখনকে অতিক্রম করত, তাহলে অশুভ দৃষ্টিই তা করতে পারত।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৫৮৩১; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৩৯)

নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘অশুভ দৃষ্টি মানুষকে কবরে এবং উটকে পাতিলে প্রবেশ করিয়ে ছাড়ে।’ (সহিহুল জামে লিশ্ শায়েখ আলবানি, হাদিস : ৪১৪৪)

একারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং উম্মতকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন তার মাঝে কুদৃষ্টি একটি।

এ বিষয়ে আবু সাহল ইবনে হুনায়ফ রা.-এর একটি ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। ঘটনাটি হলো- একবার গোসল করার জন্য তিনি তার পোশাক খুললেন। এ সময় তার গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহ দেখৈ আমের ইবনে রবীয়াহ বললেন, আমি আজ পর্যন্ত কারও এমন সুন্দর ও সুঠাম দেহ দেখিনি।তার এমন কথার পর সঙ্গে সঙ্গে সাহল ইবনে হুনায়ফের শরীরে জ্বর এলো।

একথা জানতে পেরে সুস্থতার জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমের ইবনে রবীয়াকে আদেশ করলেন, সে যেন অজু করে অজুর পানির কিছু অংশ পাত্রে রেখে দেয়। এরপর তা যেন সাহল ইবনে হুনায়ফের শরীরে ঢেলে দেওয়া হয়। নবীজির কথামতো তাই করা হলো। এরপর সাহল ইবেন হুনায়ফ সুস্থ হলেন, তার জ্বর ভালো হলো।

এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমের ইবনে রবীয়াকে সর্তক করে বললেন, কেউ আপন ভাইকে কেন হত্যা করে?তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হযেছিলো তখন তুমি তার জন্য বরকতে রদোয়া করলে না কেন? মনে রেখো চোখ লেগে যাওয়া সত্য। (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭১৪)

এসব আয়াত ও হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে কুদৃষ্টি বা বদনজর অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয়। ক্ষতিকর ওষুধ কিংবা খাদ্য যেমন মানুষকে অসুস্থ করে, শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতায় যেমন রোগব্যাধির জন্ম নেয়, ঠিক তেমনি কুদৃষ্টিরও বিশেষ প্রভাব আছে। তবে এ ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস রাখতে হবে, দৃষ্টিশক্তির মধ্যে এমন ক্ষমতা মহান আল্লাহই দান করেছেন। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

এর পাশাপাশি অন্যের জান ও মালের যদি কেউ কোনও বিস্ময়কর বা অস্বাভাবিক উন্নতি দেখে তাহলে তার উচিত দোয়া করা যেন আল্লাহ তায়ালা এতে বরকত দান করেন। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিস্ময়কর ও মনোমুগ্ধকর জিনিস দেখার পর

ما شاء الله لا حول ولا قوة إلا بالله

‘মাশাআল্লাহ লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে, (আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে; আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।’) তাকে কুদৃষ্টি স্পর্শ করবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/২১, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৯৭)

এ জাতীয় আরো সংবাদ

যাদের ওপর জুমার নামাজ আবশ্যক নয়

নূর নিউজ

শুধু রমজানের শেষ তিন দিন ইতিকাফ করা যাবে?

নূর নিউজ

খালি গায়ে গোসল করা যাবে?

নূর নিউজ