সাহাবি উৎবাহ ইবন গাযওয়ান রা. একদিন ভাষণ দিতে গিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও তার স্তুতি প্রকাশ করে বললেন, দুনিয়া তার সমাপ্তি এবং পশ্চাদাপসারণের ঘোষণা দিচ্ছে। দুনিয়ার কিছুই বাকী থাকবে না, একমাত্র ততটুকু যা পাত্রের নিচে অবশিষ্ট থাকে; যা পাত্রের মালিক গ্রহণ করে থাকে। নিশ্চয়ই তোমরা এমন এক বাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছো যা শেষ হওয়ার নয়। অতএব তোমরা উত্তম আমলসহ সেদিকে স্থানান্তরিত হও। আর আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের দরজার দুই কপাটের মধ্যকার ব্যবধান চল্লিশ বছরের রাস্তার সমপরিমাণ। অথচ এমন একদিন আসবে যেদিন সেখানেও প্রচণ্ড ভীড় থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৭)
পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে জান্নাতকে অবহিত করা হয়েছে বিভিন্ন নামে।
জান্নাতুল ফিরদাউস
এই জান্নাতের নাম আমরা সবাই জানি। হাদিসের ভাষ্যমতে এটি এমন জান্নাত যা আরশের কাছাকাছি অবস্থিত। ঈমান ও সৎকর্মশীলদের জন্য মহান আল্লাহ যে জান্নাত সাজিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সেই জান্নাতকে জান্নাতুল ফিরদাস নামে অভিহিত করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফ, আয়াত : ১০৭)
দারুস সালাম (শান্তির আবাস)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যা করত তার জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৭)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘দারুস সালাম’ নামে জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ শান্তির আবাস।
জান্নাতুন নাঈম (নিয়ামতে ভরপুর জান্নাত)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথনির্দেশ করবেন; নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৯)
দারুল মুত্তাকিন (মুত্তাকিদের আবাসস্থল)
মহান আল্লাহ তাঁর মুত্তাকি বান্দাদের ভীষণ ভালোবাসেন, তাই তিনি পবিত্র কোরআনে জান্নাতকে ‘দারুল মুত্তাকিন’ বা মুত্তাকিদের ঘর বলে অবহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছিল তাদেরকে বলা হলো, তোমাদের রব কী নাজিল করেছেন? তারা বলল, মহাকল্যাণ। যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকিদের আবাসস্থল কত উত্তম! (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩০)
আল হুসনা (শুভ পরিণাম) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরো বেশি। আর ধুলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না।
তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৬)
দারুল মুকামাহ (স্থায়ী আবাস)
মহান আল্লাহ বলেন, যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেখানে কোনো ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৫)
এই আয়াত মহান জান্নাতকে ‘দারুল মুকামাহ’ বা স্থায়ী আবাস বলে অভিহিত করেছেন, যেহেতু জান্নাতে প্রবেশকারীরা সেখানে স্থায়ী হবে।
জান্নাতু আদন : আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরো (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহা সাফল্য। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘জান্নাতু আদন’ নামে একটি জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
আল গুরফাহ (সুউচ্চ কক্ষ)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারাই, যাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ৭৫)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার হিসেবে ঠিক করা জান্নাতকে ‘জান্নাতুল খুলদ’ নামে অভিহিত করেছেন।
জান্নাতুল খুলদ (স্থায়ী জান্নাত)
মহান আল্লাহ বলেন, বলুন, এটাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে মুত্তাকিদেরকে? তা হবে তাদের প্রতিদান ও প্রত্যাবর্তনস্থল। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ১৫)
দারুর কারার
মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার সম্প্র্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাত, তা হচ্ছে স্থায়ী আবাস। (সুরা : গাফির, আয়াত : ৩৯)