গণ-আন্দোলনের মুখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুদায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর দেশের মানুষ মনে করে খুঁজে পেয়েছে নতুন পথের দিশা। কিন্তু সরকার কঠোর না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে দেশের মানুষ হতাশ। যখন-তখন রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন এবং বিশৃঙ্খলায় জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে খুন, ছিনতাই ও চলন্ত যানবাহনে নারীদের শ্লীলতাহানিসহ ভয়ানক সব অপকর্ম। সবার মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আর এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। সাধারণ মানুষ অনিরাপদ বোধ করছেন। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির এই ষড়যন্ত্র ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে আওয়ামী নেতাকর্মী ছাড়াও জড়িত আছেন প্রশাসন ও পুলিশের বেশ কয়েকজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এখানেই শেষ নয়, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াকে ইস্যু করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ’। টাকার বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে অনেকেই। যা দেশকে এক অস্থিরতার দিকে ঢেলে দিচ্ছে।
আজ রবিবার (১৬ মার্চ-২৫) বিকেল ৪টায় বিগ অ্যাপেল রেস্তোরাঁ এন্ড পার্টি সেন্টার, পুরানা পল্টন, আজাদ সেন্টার, ঢাকায় পার্টির আমীর আল্লামা সারোয়ার কামাল আজিজীর সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব ডা. মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস খান ও সংগঠন সচিব অধ্যক্ষ আবু তাহের খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত “ইফতার মাহফিলে’ বক্তাগণ উপরোক্ত কথা বলেন।
মহিমান্বিত রমাজান মাস ঐক্যের বার্তা নিয়ে এসেছে। কাজেই রাজনৈতিক দল, জনগণ বা সরকারসহ দেশ-বিদেশ থেকে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার এ কাজ সবার। এই ঐক্য ধরে রাখলে আশা করি, আর কখনোই ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কীভাবে কাজ করা যায়, এবং যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা-উন্মত্ততা রুখে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ফ্যাসিবাদ যে কোনো সময় আবার ফিরে আসতে পারে। সেই রাস্তা যেন তৈরি করে না দিই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, লড়াই করছি; নিজেরা ভাইয়ে ভাইয়ে রক্ত ঝরাচ্ছি। যে কাজগুলোর মধ্য দিয়ে কিন্তু ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার শঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি না করে ঐক্যের মধ্যে থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে আমরা কোনোমতেই যেন আর কোনো বিভাজন সৃষ্টি না করি। শান্ত থেকে ধীরে ধীরে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ঐক্যের কথা বললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা চলছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করছে। শান্তিশৃঙ্খলা কারা ধ্বংস করতে চায়? তাদের চিহ্নিত করতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে।
বক্তারা আরো বরেন, ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি ২০১৩ সালে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের লালিত ছায়া সরকার হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবিতে গনজাগরণ মঞ্চ গঠিত হয়। এবং সরকারের মদদে কিছু নাস্তিক ব্লগার আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে। কিন্তু চব্বিশ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আওয়ামী দোসর শাহবাগীরা প্রকাশ্যে এসে বাম-রাম সংগঠনসহ কিভাবে মিছিল করে আবার পুলিশের উপর হামলা করারও দুঃসাহস পায়! যা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা লাকিসহ ফ্যাসিস্ট দোসর শাহবাগীদের গ্রেফতারের দাবি করছি।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের এক ফেসবুক পোস্টে ২০১৩ সালে হেফাজতকে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহার করার দাবি করা হয়েছে। যা এমন দাবি মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য কাম্য নয়। হেফাজত কখনো কারো ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। হাজি শরীয়তুল্লাহ ও শহিদ তিতুমীর এ পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী জমিদারগিরির বিরুদ্ধে প্রান্তিক গণমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার লড়াইয়ের যে পথ দেখিয়েছিলেন, সেটারই উত্তরসূরি শাপলার চেতনা। সুতরাং শাপলার চেতনার সাথে আমাদের আবেগ জড়িত রয়েছে। সুতরাং আমরা শাপলার রক্তে সাথে গাদ্দারী করার সুযোগ নেই।
এতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ নেজামত ইসলাম পার্টির প্রধান উপদেষ্টা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইসলমাী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আশরাফী আলী আকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী,মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেরাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মুফতি আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, সংগঠন সচিব মাওলানা আবু তাহের খান, দপ্তর সচিব মুফতি দ্বীনের আলম হারুনী, যুব বিষয়ক সচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডক্টর ফয়জুল হক, মাওলানা আব্দুর রহিম আল মাদানী, ক্বারি মাসুম বিল্লাহ আনওয়ারী, ডেসটিনি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান, মাওলানা আশরাফ আলী, মহানগর নেতা মুফতি আতিকুর রহমান সিদ্দিকী বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের মহাসচিব বি এম আমির জিহাদী, ঢাকা মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।