তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে

আল্লাহতায়ালা মহানবি (সা.)-এর চরিত্র মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন এই পৃথিবী। তাঁর সৌন্দর্যের রঙে রাঙিয়েছেন সব সৃষ্টি। উত্তম চরিত্রের সমাবেশ ছিল তাঁর মাঝে।

সততা-নিষ্ঠা, ধৈর্য, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা, স্থিরতা, নম্রতা, সহনশীলতা, বীরত্ব-সাহসিকতাসহ হাজারও বৈশিষ্ট্যের ভূষণে ছিলেন তিনি বিভূষিত। তাঁর জীবন মাধুরীর ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী’। (সূরা আল-কলম-০৪)।

সাহাবি কবি হাসসান বিন সাবিত (রা.) রাসূল (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আপনার চেয়ে সুন্দর আমার দুচোখ কাউকে কখনো দেখেনি, আপনার চেয়ে সুন্দর সন্তান কোনো নারী কখনো জন্ম দেয়নি। আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সব দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত করে। হে আল্লাহ! আপনি যেমন চেয়েছেন ঠিক তেমন করেই তাঁকে সৃষ্টি করেছেন’।

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন সততায় সবার প্রিয়। মক্কার মুশরিকদের কাছে এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন যে, তারা যে কোনো সমস্যার সমাধানে মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে ছুটে আসত। সবার আমানতের বিশ্বস্ত স্থান ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.)। তাই তো তারা মুহাম্মাদের নাম দিয়ে ছিল ‘আল আমিন’ বা বিশ্বস্ত।

বিনয় ও নম্রতায় ছিলেন তিনি অনন্য। রাজা-বাদশাদের মতো জীবনযাপন করেননি কখনো। তিনি ছিলেন সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত। অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখতেন না। রাসূল (সা.) যখন মজলিসে বসতেন তখন অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবেই বসতেন। যার দরুন অনেক সময় আগন্তুক এসে চিনতে পারত না প্রিয় নবিজিকে। নিজের কাজ নিজেই করতেন-জুতা ঠিক করা, কাপড় সেলাই করা থেকে শুরু করে সব কাজ তিনিই করতেন।

আসওয়াদ (রা.) বলেন, তিনি আয়েশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করেন, রাসূল (সা.) যখন বাড়ির ভেতরে অবস্থান করতেন তখন কী কাজ করতেন? আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি বাড়ির কাজে লিপ্ত থাকতেন। ঘর ঝাড়ু দিতেন, বাজার থেকে নিজেই সদায় বহন করে নিয়ে আসতেন। (সহিহ বুখারি)।

তাঁর ভাষা ছিল মাধুর্যপূর্ণ। কথা বলতেন কোমল ও নরম ভাষায়। কাউকে আঘাতমূলক কথা বলতেন না। মাঝে-মাঝে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সঙ্গে হাসি মজাও করতেন, কিন্তু মজার ছলেও নবিজি কখনো শ্রুতিকটু কথা বলতেন না। তাঁকে কেউ কটুকথা বললেও তিনি প্রত্যুত্তরে কটুকথা বলেননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) অসদাচরণের প্রত্যুত্তরে অসদাচরণ করতেন না বরং অসদাচরণের পরিবর্তে সুন্দর আচরণ করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি)।

তিনি দাস-দাসী সেবক-সেবিকাদের পর্যন্ত কখনো কটুকথা বলেননি, এমনকি তাদের কোনো কাজের প্রতিও কখনো অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-এর দশ বছর খেদমত করেছি, কিন্তু কখনো রাসূল (সা.) আমার কোনো কাজের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি এবং আমাকে কখনো এ কথাও বলেননি, তুমি এ কাজ কেন করেছ কিংবা তুমি এ কাজ কেন করোনি? (তিরমিজি)।

নবিজি ছিলেন ক্ষমাশীল। প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিতেন। ক্ষমা ছিল তাঁর অনন্য ভূষণ। মক্কার জীবন থেকে শুরু করে পুরোটা জীবন ছিল তাঁর কষ্টের। কাফের-মুশরিকরা প্রতিটি মুহূর্তেই তাঁর ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাত। কখনো রেখেছে অবরুদ্ধ করে আবার কখনো করেছে পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত। কিন্তু নবিজি প্রতিশোধ তো দূরের কথা বিপরীতে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাদের। মক্কা বিজয়ের পর সবাই ভেবেছিল, আজ নিশ্চয় মক্কার অলি-গলিতে বয়ে যাবে রক্তের স্রোত। কিন্তু পৃথিবী দেখেছে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষমার দৃষ্টান্ত।

দান ও উদারতায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ উদার ও দানবীর। তাঁর কাছ থেকে কেউ কখনো ফেরেনি শূন্য হাতে। যখনই তাঁর কাছে কোনো কিছু আসত, সঙ্গে সঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মাঝে বিলিয়ে দিতেন। নিজে না খেয়েও অন্যদের মুখে তুলে দিতেন অন্ন। হজরত মুসা বিন আনাস (রা.) তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.)-এর কখনো এমন হয়নি যে, কেউ তার কাছে কিছু চেয়েছে আর তিনি তা দেননি।

লজ্জা ও শালীনতায় তিনি সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সব সময় রাসূল (সা.) শরীর ঢেকে রাখতেন। কেউ কখনো তাঁর শরীর মোবারক দেখেনি। লজ্জাশীলতা সম্পর্কে তিনি বলেন-‘লজ্জা হলো ইমানের অঙ্গ’। কারো দিকে এক পলকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকতেন না। তিনি যদি কোনো কিছু অপছন্দ করতেন তাহলে তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। সবাই বুঝতে পারত, রাসূল (সা.) তা অপছন্দ করেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূল (সা.) পর্দানশীন দুলহানের থেকেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। আর তিনি যখন কোনো বিষয় অপছন্দ করতেন তখন তাকে সরাসরি কিছু বলতেন না, কিন্তু আমরা তাঁর চেহারা মোবারক দেখে তা বুঝতে পারতাম।

(শামায়েলে তিরমিজি : পৃ-২৪)।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

সালাম আগে দেবেন কে?

নূর নিউজ

বৃষ্টির সময়ের ৬টি সুন্নাহ

নূর নিউজ

ফজর নামাজ পড়া সহজ হবে যেভাবে

নূর নিউজ