দূষণ পরিমাপে সড়কের পাশে বসবে যন্ত্র, জাপানের সঙ্গে চুক্তি সই

বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম নগরী। দেশের বৃহত্তম দুটি নগরী দূষণের জন্য সব থেকে বেশি অবদান রাখে পরিবহন। পরিবহন কী পরিমাণে দুই নগরীকে দূষণ করছে তা পরিমাপের জন্য দুই শহরের সড়কের পাশে বসবে আধুনিক জাপানি প্রযুক্তির যন্ত্র। প্রতিটা যন্ত্র জাপান থেকে আমদানি করে সড়কের পাশে বসিয়ে দেওয়া হবে।

এক একটি যন্ত্র কিনতে সরকারের খরচ হবে সাড়ে ৭ কোটি টাকার ওপরে। এই আধুনিক যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে এয়ার কোয়ালিটি স্টেশন। এজন্য জাপান ও বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা অনুদান দেবে জাপান।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শেরেবাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে ‘বিনিময় নোট’ ও ‘অনুদান চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী ‘বিনিময় নোট’ ও ‘অনুদান চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন। জাপান সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনচি ‘বিনিময় নোট’ এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাইকা’র চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদি ‘অনুদান চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন।

প্রকল্পটি পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক মার্চ ২০২৫ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে যানবাহন থেকে নির্গত দূষিত বায়ুর প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য কন্টিনিউয়াস এয়ার মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করা। স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে যানবাহনের নির্গমন থেকে উদ্ভূত বায়ু দূষণকারী উপাদান পরিমাপ ও বিশ্লেষণ করা যাবে।

দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে জাপান বাংলাদেশের একক বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ জাপান সরকার ৩২.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। নমনীয় ঋণ ছাড়াও জাপান বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে, যার মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘দ্যা প্রজেক্ট ফর ইম্প্রুভমেন্ট অব ইক্যুইপমেন্ট ফর এয়ার পলুশন মনিটরিং প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মোট ৮টি জাপানি প্রযুক্তির যন্ত্র স্থাপন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার হাউজ বিল্ডিং, বনানি, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডির সড়কের পাশে এই স্টেশন স্থাপন করা হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সিডিএ (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) এবং বিএসআইয়ের (বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন) জমিতে দুটি স্টেশন স্থাপন করা হবে। একটি স্টেশন থাকবে ভ্রাম্যমাণ। যে সব এলাকায় যানবাহন বেশি সেই সব এলাকায় এটা টহল দেবে। এসব যন্ত্রপাতি ২৪ ঘণ্টা বায়ুর মান দেবে এবং পরিবহন কী পরিমাণে দুই নগরীতে দূষণ বাড়াছে তার তথ্য দেবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর আরও জানায়, আধুনিক যন্ত্র ২৪ ঘণ্টা ডাটা সরবরাহ করবে। কোনো পরিবহন কী পরিমাণে দূষণ করছে এবং দূষণ রোধে সরকারের করণীয় বিষয়ও নির্ধারণ হবে এর মাধ্যমে। দূষণ রোধে পরিবহন খাত পরিবর্তন ও আধুনিকতায় করণীয় বিষয়ে অবগত হতে পারবে সরকার। এরপর পরিবহন খাতকে ঢেলে সাজাতে পারবে। পরিবহন খাতে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে চায় জাপান। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাপানি প্রযুক্তি স্থাপনের পর এগুলো ১০ বছর সেবা দেবে।

প্রকল্পের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ১০৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং জাপানি অনুদান ৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মার্চ ২০২৫ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাস্তার পাশের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা এবং সড়ক ও পরিবহন সম্পর্কিত দূষণ মূল্যায়ন করা।

নতুন একটি প্রকল্পের আওতায় পরিবহন থেকে বায়ু দূষণের মাত্রা নিরুপণের জন্য দুটি শহরের রোড সাইড মনিটরিং স্টেশন স্থাপন কর হবে এবং বায়ুদূষণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যন্ত্রপাতিগুলো জাপান থেকে আমদানি করা হবে। পরিবহন ছাড়াও অন্যান্য যে-সব কারণে বায়ুদূষণ হয় তা নিরূপণ করা এবং বায়ুদূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রতিকূল প্রভাব পড়ে তা নিরূপণ করাসহ বায়ুদূষণ সংক্রান্ত অন্যান্য চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে তা সমাধানের কৌশল এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটির ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় অনুমোদন হয়েছে। সামনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে প্রকল্পটি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মাদ আব্দুল মোতালিব বলেন, প্রকল্পের আওতায় মোট ৮টি আধুনিক জাপানি প্রযুক্তির এয়ার পলুশন মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। যন্ত্রগুলোর এয়ার কোয়ালিটির ২৪ ঘণ্টা ডাটা দেবে। রোড সাইডের দূষণ কাউন্ট করা হবে। কী পরিমাণে পরিবহন দূষণ করছে তা আইডেন্টিফাই করা হবে। এর পরে সরকার পলিসি ঠিক করবে কী করা যায়।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় শাস্তি পেয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম

নূর নিউজ

চকবাজারে পলিথিন কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট

নূর নিউজ

নিবন্ধিত শিক্ষকদের বদলির দাবিতে মানববন্ধন

নূর নিউজ