দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া বেপরোয়াভাবে তছনছ করে দিচ্ছে জীবনযাত্রা। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে ব্যবসায়ীদের অদম্য লোভ, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার সিন্ডিকেট, আওয়ামী আশকারা এবং সরকারের নিষ্ঠুর নির্লিপ্ততা। মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও ক্ষোভ নিরসনের পরিবর্তে নেতানেত্রীরা এসব নিয়ে মশকারা করছেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ ও সমাবেশে এবার তারা লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দিচ্ছেন। ১৯৭৪ সালে এমনিভাবে বিরোধী দমনে লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আর সে ঘোষণা এসেছিল সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থেকে।
গত ১২ বছরে দ্রব্যমূল্যের ঘোড়া লাগামহীনভাবে বেড়েছে। বাড়তে বাড়তে তা আকাশচুম্বী হয়েছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ তা ছুঁতে পারছে না। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সেবা এবং জ্বালানির মূল্য। হাসপাতাল, পরিবহন, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি- সর্বত্রই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এর দাম। যানবাহনে ১২ বছরে ভাড়া বেড়েছে অন্তত ১২ গুণ। উৎপাদনের সাথে সেবা খাতের অপরিহার্য সম্পর্ক রয়েছে। যখন তেলের দাম বাড়ে তখন সব কিছুরই দাম বাড়ে। আর এ দেশের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়াভাবে শাকসবজি থেকে শুরু করে সব কিছুরই দাম বিনা দ্বিধায় বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
সোজা কথায় বলতে গেলে বাজারে আগুন লেগেছে। সেই আগুনে আমাদের বিবেক, আমাদের প্রশাসন এবং আমাদের রাজনীতি, সবকিছুই যেন জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের লোভ সীমালঙ্ঘন করেছে। এ দেশের রাজনীতি আর রাজনীতিবিদরা পরিচালনা করছে না। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। সেই সাথে রাজনীতির বাণিজ্যিকরণ ঘটেছে। প্রমাণ হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা জাতীয় সংসদ সদস্যদের পেশার হিসাবনিকাশ দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে যদি ২০ ভাগ ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে তা এখন ৮০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ যেহেতু দেশের শাসনব্যবস্থাকে পরিচালনা করে সুতরাং তাদের প্রভাব অবশ্যই একটি বিবেচ্য বিষয়। সেবার পরিবর্তে লাভ-লোকসানের হিসাব করবেন জাতীয় সংসদ সদস্যরা এটাই স্বাভাবিক।
আগে নির্বাচন যখন স্বাভাবিক ছিল তখন তারা ব্যয়ের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। কোটি কোটি টাকা খরছ করার গল্প শোনা যেত। এখন সেই একই রকম টাকা খরচ করতে হয় তাদের তবে প্রতিযোগিতায় নয় প্রতিনিধিত্বের জন্য। কম বেশি সব দলের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেহেতু জাতীয় সংসদে ৯৭ ভাগ প্রতিনিধিত্ব করছে সেহেতু অভিযোগের পরিমাণটাও সে রকম। আজকাল মন্ত্রিত্বও নাকি কেনাবেচা হয়। রাজনীতিই যখন কেনাবেচা হয় তখন কেনাবেচার জগৎ অর্থাৎ ব্যবসাটি সেরকমই হওয়া স্বাভাবিক। প্রায়শই শোনা যায় ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি। মন্ত্রীরা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে লম্পঝম্প করেন। আসলে একটি লোমও ছিড়তে পারেন না তারা। তার কারণ, ডানে-বাঁয়ে, উত্তরে-দক্ষিণে সর্বত্রই তারা। কাকের মাংস কাকে খাবে কী করে? সুতরাং দ্রব্যমূল্য হ্রাসের কোনো কার্যক্রমই এই সরকার কার্যকর করতে সক্ষম নয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থা, চাহিদার ওঠানামা ও আমদানি-রফতানি। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্য ও খাদ্যসামগ্রী। আমাদের দেশে খাদ্যসশ্যের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন ভরা মৌসুম। চালের দাম বাড়ার কোন হেতু নেই। এখন মোটা চালের খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা। এটি আমাদের প্রতিবেশী ভারত এবং উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। কারণ প্রথমত বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পথে পথে পরিবহন চাঁদাবাজি আরেকটি কারণ। চাল মোকামে আসার পর আড়তদার ও মিল মালিকরা আরেকবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। সরবরাহ কম থাকলে চাল মজুদ করে। সৃষ্টি হয় কৃত্রিম সঙ্কট। সরকারের অদূরদর্শীমূলক নীতিমালা কখনো কখনো সর্বনাশের কারণ হতে পারে। সব বছরই সরকার আড়তদার ও মিল মালিকদের চাল কেনায় প্রাধান্য দেয়। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হয়। আর এসব মধ্যস্বত্ব ভোগীরা এই সরকারেরই লোক। সে জন্য মন্ত্রী বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন হস্তক্ষেপ করে তখন তারা পাত্তা দেয় না। মন্ত্রীর সুবচন নির্বাসনে যায়।
দ্রব্যমূল্যের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শাকসবজির মতো যেসব দেশজ দ্রব্যাদি রয়েছে তার মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কী? আবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে কখনোই তা কমে না। যেমন কয়েক মাস আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে তখন এখানে দাম কমেনি। এখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। সে কারণে সরকার অচিরেই আর একদফা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা কষতে পারে। তখন সেটি আর বাংলাদেশের মানুষের সহ্য সীমার মধ্যে থাকবে না। উল্লেখ্য, যে গত বছর সরকার যখন অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন ভুক্তভোগীরা বাধা দিয়েছিল। সরকার সে বাধা মানেনি ফলে অর্থনীতির সনাতন নিয়মানুযায়ী পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয় বেড়েছে। সেই সাথে সেবা খাতগুলো- বিদ্যুৎ, পানি,গ্যাস ও পরিবহনসহ প্রায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন সেবা খাতে ভর্তুকি প্রদান করছে। সব সেবা খাতের সব ব্যক্তি যে এই ভর্তুকি পাচ্ছে তা নয়; বরং সেখানেও দলবাজি। বেছে বেছে সেই শাহেদরাই লাভবান হয়েছে। অথচ এই ভর্তুকি পাওয়ার কথা লাখো কোটি গরিব মানুষের। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ‘শুধু নিশি যাপনের জন্য, শুধু প্রাণ ধারণের জন্য’ অশেষ কষ্ট করে যাচ্ছে।
এক সপ্তাহে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা। খামারে চাষ করা মাছের দাম বেড়েছে ত্রিশ থেকে ষাট টাকা। এক বছর আগে পাঁচ লিটার সয়াবিন বোতলের দাম ছিল ৫৫০ টাকা এখন তা ৮০০ টাকা। সয়াবিন তেলের বোতলের লেভেল ঘষামাজা করে বেশি দরে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। শাকসবজির দামেও আগুন লেগেছে। এখন সবকিছু ওজনে বিক্রি হচ্ছে। এটি বেশি দাম নেওয়ার আরেকটি ফন্দি। বাজারে একটি লাউয়ের দাম ১০০ টাকা। ফুলকপির দাম আকার প্রকারে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। গোল আলুর কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা। যে বেগুন এ দেশে দু’টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে এখন তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা। রোজা এলে এর দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পেয়াজকলি ৩৫ টাকা কেজি, লেবু প্রতি পিস আট টাকা, ডাঁটাশাক প্রতি মুঠা ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শালগম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ২৫ থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ও ফুলকপি প্রতি পিস ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি কেজি শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৯০ থেকে ১১০ টাকা, মূলা ৩৫-৪৫ টাকা এবং পেয়াজের ঝাঁজ এখনো শেষ হয়নি। এভাবে প্রতিটি শাকসবজি ও ফলমূলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এই সে দিনও এগুলোর দাম ২ কিংবা ৩ ভাগেরও কম ছিল।
‘সত্যিই সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ’ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎসব আনন্দে প্রতিটি দ্রব্যের দাম কমে যায়। অথচ এই দেশে দাম বাড়ে জ্যামিতিক হারে। উৎসব উপলক্ষে বিশেষ ছাড়, উপহার ও সহজ শর্তে মালামাল সরবরাহ করা হয়। অথচ এই দেশে রোজার মতো পবিত্র ও সংযমের মাসে অসংযম পরিলক্ষিত হয়। এ দেশের অধিকাংশ লোক ধার্মিক। ধর্মের কোনো প্রভাব ঈদে ও রমজানে পরিলক্ষিত হয় না। অন্যায় ব্যবসা করতে বিবেকে বাধে না। সমাগত রমজানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর কিছু করতে সক্ষম হচ্ছেন না। বরং তারা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে মশকরা করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন কাঁচাবাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ তার দায়িত্ব নয়। আরেকজন মন্ত্রী বলেছেন উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য এখনো অনেক কম। আরেকজন মন্ত্রী আরেকটু এগিয়ে বলেছেন বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই বেশি দাম হলেও তাদের সমস্যা হবে না। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আরেকজন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা আছে বলে তারা চিকন চালের ভাত খাচ্ছেন। তাই চিকন চালের দাম বেড়েছে। এসব কথা শুনে মুসলিম লীগের খাজা-গজাদের কথা মনে পড়ে। জনগণ ভাত খেতে পায় না শুনে তারা বলত, ‘তাহলে তারা পোলাও খেলেই পারে’। আওয়ামী মন্ত্রীরা জনগণের হাঁড়ির খবর রাখেন না। তারা আশপাশে আওয়ামী নেতাকর্মীদের দেখেন। তারা গত ১২ বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়; বটগাছ হয়েছে। সুতরাং মন্ত্রীরা অঢেল ক্রয়ক্ষমতা দেখছেন। চিকন চালের ভাত খেতে দেখছেন। এটি সাধারণ মানুষের কোনো চিত্র নয়; বরং অসাধারণ মানুষের গল্প। ইংরেজিতে এদের বলে ‘নুভোরিচ’। আওয়ামী শাসনের ১২ বছরে বাংলাদেশ ‘অতিদ্রুত অধিক ধনীর দেশে’ পরিণত হওয়ার সুনাম অর্জন করেছে। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও অতি সম্প্রতি তার কলামে এদের গুণগান(!) করেছেন।
কথায় বলে ‘ভাত দেওয়ার মুরদ নেই, কিলের গোসাঁই’। আওয়ামী মন্ত্রীদের এসব উপহাসের পর উৎপাত শুরু হয়েছে প্রতিবাদী মানুষদের ওপর। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা সমাবেশের আয়োজন করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হলেও ওই প্রতিবাদ সভাগুলো সফলভাবেই তারা ঠেঙিয়ে দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ২ মার্চ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানায়। অধিকাংশ জেলায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশি বাধায় এসব কর্মসূচি পালিত হতে পারেনি। ইতঃপূর্বে অনুসৃত কুকৌশল অনুযায়ী আওয়ামী নেতাকর্মীরা পুলিশের পিছু পিছু বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছে এবং আটক করেছে আট নেতাকর্মীকে। পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, নাটোর, মাগুরা, সুনামগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং বগুড়া থেকে এসব হামলার খবর পাওয়া যায়। তবে বরিশাল, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, নওগাঁ, নীলফামারী, বাগেরহাট, রাঙামাটি, হবিগঞ্জ ও শরীয়তপুরে সফলভাবে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হামলার ব্যপারে বরাবরের মতো তারা বলেছে, এগুলো বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল। তাদের কোনো নেতাকর্মী হামলা চালায়নি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নবগঠিত রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদ ভিপি নুরের নেতৃত্বে শাহবাগে মিছিল বের করে। পুলিশ হামলা করে মিছিল পণ্ড করে দেয়। গুলশান জিরো পয়েন্টে গণসংহতি আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশ তাও পণ্ড করে দেয়। এতে বুঝা যায় যে, জনগণের পক্ষ থেকে সভা সমাবেশের মৌলিক অধিকার আরো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদের মতো গণমুখী কর্মসূচিও যে সরকার সহ্য করতে পারছে না- এটি তার প্রমাণ। রাজনৈতিকসচেতন মহল মনে করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে আন্দোলন অতিদ্রুত জনসমর্থন লাভ করতে পারে। উল্লেখ্য যে, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি দীর্ঘ দিন ধরে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের কথা বলে আসছে। তাই সরকার ভয় পাচ্ছে যাতে আন্দোলনটি ব্যাপকতা অর্জন করতে না পারে। অবশ্য শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে গণ আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের এই কৌশল নতুন নয়। ১৯৭৪ সালে এ ধরনের আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা হলে শক্তি প্রয়োগে তা দমন করা হয়। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের গণ আন্দোলনও সরকার রক্তপাতের মাধ্যমে দমন করে। প্রাথমিক অবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে উত্থিত আন্দোলন একই কৌশলে প্রতিরোধের চেষ্টা সরকার করছে। তবে অতি শক্তি প্রয়োগের কারণে এবং অতি সংবেদনশীলতার কারণে আন্দোলনটি শিগগিরই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com