নিউইয়র্ক পুলিশের শীর্ষ পদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাহ, স্থানীয়দের মাঝে আনন্দঘন পরিবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্বাহী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান খন্দকার আবদুল্লাহ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে তিনিই প্রথম এই দায়িত্ব পেলেন। এর আগে নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশি হিসেবে তিনিই প্রথম ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন তিনি।

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক পুলিশ-এনওয়াইপিডির কমাণ্ডিং অফিসার হিসেবে ব্রুকলিনের ৬৯ প্রিসেন্টে যোগ দিয়েছেন ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ।

এনওয়াইপিডিতে কমান্ডিং অফিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শীর্ষস্থানীয় পদ। এর ওপরের পদগুলো পূরণ হয় রাজনৈতিক নিয়োগের মাধ্যমে।

৩৩ বছর বয়সী প্রিসেন্ট প্রধান ক্যাপ্টেন খন্দকার আবদুল্লাহ রাজনৈতিক আনুকূল্য পেলে আগামী দিনে হতে পারেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ কমিশনার।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অফিসারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার খন্দকার আবদুল্লাহর পদোন্নতির সুখবরটি এলো। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশিরাই নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের শীর্ষপদে নেতৃত্ব দেবেন।

খন্দকার আবদুল্লাহ চ্যানেল জানান, ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

বাবা-মায়ের সঙ্গে ১৯৯৩ সালে খন্দকার আবদুল্লাহ আমেরিকায় অভিবাসী হন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত কুইন্সের এস্টোরিয়া আর উডসাইড এলাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা।

২০০৫ সালে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন আবদুল্লাহ। কলেজে পড়ুয়া অবস্থায় জব ফেয়ার থেকে এনওয়াইপিডিতে লোক নেয়ার কথা জানেন। প্রথমে অনেকটা খেয়ালের বশে খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে পুলিশে যোগ দেন তিনি। এরপর ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত করেন আবদুল্লাহ। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

২০০৭ সালে পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ নেন খন্দকার আবদুল্লাহ। যোগ দেন এনওয়াইপিডিতে। পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণ শেষে খন্দকার আবদুল্লাহ প্রথম দায়িত্ব পান, ইস্ট নিউইয়র্কের অপরাধবহুল এলাকা হিসেব পরিচিত ব্রুকলিনের ৭৫ প্রিসেন্টে (পুলিশ অফিস)।

২০১৩ সালে আবদুল্লাহ এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তখন দায়িত্ব পান সাউথ ব্রংকসে, যা নিউইয়র্ক পুলিশের সার্ভিস এলাকা-৭ নামে পরিচিত। অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাদাপোশাকের পুলিশের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে সাফল্যও পান তিনি। লং আইল্যান্ড সিটির ১০৬ প্রিসেন্টেও এক বছর সার্জেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই বাংলাদেশি আমেরিকান।

২০১৬ সালের আগস্টে খন্দকার আবদুল্লাহ লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান। পদোন্নতির পর তাঁকে নিউইয়র্কে সিটির ২৮ প্রিসেন্টে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সিটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ হার্লেম এলাকায় লেফটেন্যান্ট অবস্থায় খন্দকার আবদুল্লাহ কমান্ডিং অফিসারের একান্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন সততা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায়। অপরাধ সংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ, কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ও গৃহীত কৌশলের সাফল্য নিয়ে কাজ করে কৃতিত্ব পান আবদুল্লাহ।

প্রসঙ্গত গেলো মে মাসে খন্দকার আবদুল্লাহ নিউইয়র্ক পুলিশের নানা কর্মকাণ্ড ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুযোগ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে একান্তে কথা বলেন চ্যানেল টিটির সঙ্গে। তিনি বলেন, যে নগরী তাঁকে বা তাঁর মতো অভিবাসীদের অনেক দিয়েছে, সে নগরীর নিরাপত্তার শপথ নেয়ার দিনটি ছিল বড় আবেগের।

এদিকে আবদুল্লাহ সাফল্যে স্যোশাল মিডিয়াযর মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে এনওয়াইপিডি মুসলিম অফিসার্স সোসাইটি ও বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোশিয়েশন-বাপা এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি প্রিসেন্ট প্রধান হাওয়া পৃথক পৃথক ভাবে আবদুল্লাহকে অভিনন্দন জানিয়েছে। স্যোশাল মিডিয়ায় দেয়া অভিনন্দন বার্তায় নিউইয়র্ক পুলিশ কর্মকর্তাদের এই দুই সংগঠন বলে, বাংলাদেশি আবদুল্লাহ কৃতিত্ব ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সুন্দর পারফম্যান্সের কারণে। তার সফল নেতৃত্বে আগামী দিনে আরো সুনামের সঙ্গে এগিয়ে যাবে নিউইয়র্ক পুলিশ।

নিউইয়র্ক পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বানিহীতে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশির অভাবনীয় সাফল্যে চ্যানেল টিটির পক্ষ থেকে খন্দকার আবদুল্লাহকে জানানো হয়েছে অভিনন্দন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

উত্তর প্রদেশের মাদরাসাগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার নাকি রোববার?

নূর নিউজ

যেভাবে আবার আফগানিস্তান দখলে নিচ্ছে তালেবান

আনসারুল হক

বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া

নূর নিউজ