চায়ের দোকানে ধূমপান করা নিয়ে রাজধানীর লালমাটিয়ায় ঘটে যাওয়া তুলকালাম কাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রকাশ্যে ধূমপান করা যে অপরাধ তা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রোজার মাসে আমি প্রকাশ্যে ধূমপান ও খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকার অনুরোধ করেছি।
রবিবার (২মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) পরিদর্শনে গিয়ে শনিবার লালমাটিয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীর প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে বয়স্ক একজনের ‘আপত্তি’ থেকে ‘বাকবিতণ্ডা’ ও মানুষ জড়ো হওয়া নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়।
পুলিশের ভাষ্য, লালমাটিয়ায় আড়ংয়ের পাশের একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণী চা-সিগারেট খাচ্ছিলেন। তখন পাশ দিয়ে যাওয়া একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তাদেরকে চলে যেতে বলেন। দোকানিকেও দোকান বন্ধ করতে বলেন। এ নিয়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তরুণীদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির গায়ে চা ছুঁড়ে মারেন একজন।
সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে দুই তরুণীর ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানা্য় নিয়ে যায়। পরে রাত ১১টার দিকে দুই তরুণীতে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দুই নারীর ওপর হামলার বিষয়ে আমি যতটুকু জানছি ওনারা না কি সিগারেট খাইতেছিল। ওই সময় কিছু লোক না কি নামাজ পড়তে যাইতেছিল। এসময় ওনারা (লোকেরা) বাঁধা দেওয়ায় তাদের ওপর চা ছুঁড়ে মারছে।
তিনি আরও বলেন,“ আপনারা জানেন ওপেন জায়গায় সিগারেট খাওয়া কিন্তু নারী-পুরুষ সবার জন্যই নিষেধ। এটা কিন্তু একটা অফেন্স। এজন্য আমি অনুরোধ করব, ওপেন যেন কেউ সিগারেটটা না খায়। আর এখন যে রোজার সময় সবাইকে একটু সংযমী হতে হবে। বাইরে যেন কেউ খাবারটা না খায় এ বিষয়ে আমাদের ধর্ম উপদেষ্টাও কিন্তু রিকোয়েস্ট করছে। এটা যারা রোজা থাকতেছে তাদের জন্য একটা সম্মান প্রদর্শন করা।”
জনপরিসরে ধূমপান রোধে ২০০৫ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ করে বিএনপি সরকার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনটিতে কিছু সংশোধন আনা হয়। বর্তমানে এই আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষেধ। কেউ এই আইনের লঙ্ঘন করলে ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড হবে। আর কেউ এরপরে আবারও একই অপরাধ করলে অর্থদণ্ড দ্বিগুণ হবে।
এই আইনের ২ এর ‘চ’ ধারায় পাবলিক প্লেস বলতে বোঝানো হয়েছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর ভবন, সমুদ্রবন্দর ভবন, নৌ-বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্নিমাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য অন্য কোন স্থান অথবা সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, সময় সময় ঘোষিত অন্য যে কোন বা সকল স্থান।
আরেক প্রশ্নে ব্যবসায়ীরাই জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে তাদের এ কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ করব যেন কেউ জিনিসপত্রের দাম না বাড়ায়। আপনারা দেখবেন অন্যান্য ধর্মের যে সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো হয় সেসময় তারা জিনিসপত্রের দামগুলো কমায় দেয়। আমাদের দেশে কিন্তু উল্টোটা হয়। এই রমজানের সময় দামটা কিন্তু বাড়ায় দেয়। এই বিজনেসম্যানরাই বাড়ায় দেয়। আপনারা তাদের একটু অনুরোধ করবেন তারা যেন দামটা না বাড়ায়।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই রোজায় জিনিসপত্রের দাম কিন্তু গতবারের তুলনায় কম আছে। এটাও আপনাদের বলতে হবে। অভিযান না চালায় যদি জিনিসের দাম কম রাখা যায় সেটা তো আরও ভালো।”