আজ (১৩ এপ্রিল) শনিবার, সকাল ১০ ঘটিকায় চট্রগ্রামস্থ জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সভাপতিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, সংগঠনের শৃঙ্খলা, নীতি, আদর্শ ও কর্মকৌশল বজায় রেখে বক্তব্য বিবৃতি দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ করছি। কিছুদিন পূর্বে কতিপয় ব্যক্তি আমার কাছে এসে বাইআত নেয়ার অনুরোধ করলে আমি তাদেরকে ইসলাহে নফস (আত্মশুদ্ধির) বায়আত করিয়েছি। সে মতে সবাইকে চলার অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে আমীরে হেফাজত কোনো অপপ্রচারে কেউ বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
উক্ত সভায় আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আরো বলেন, এ বছর ঈদুল ফিতর সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের পরিস্থিতি ভিন্ন। টানা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের কারণে ভূখণ্ডটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নারী-শিশুসহ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে। প্রিয়জন হারানোর তীব্র বেদনা ও মানবিক সংকটসহ অনাহার-দুর্ভিক্ষ সেখানে এখন এক অসহনীয় বাস্তবতা। এই অবস্থার মাঝেই ফিলিস্তিনে এসেছে ঈদ। তারা সব ধ্বংস, কষ্ট, বেদনার মাঝেই ঈদ উদযাপন করেছেন। আমরা আশা করি, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসানের লক্ষ্যে ওআইসিসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ’র নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রকৃত সমর্থন বাড়াতে সচেষ্ট হবেন।
সভায় হেফাজত মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত এক শ্রেণীর ধর্ম বিরোধী গোষ্ঠী এ দেশের মুসলিম প্রজন্মের মন ও মানস থেকে ইসলামী ধ্যান-ধারণাকে চিরতরে মুছে দেয়ার নীলনকশা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম ঘনিষ্ঠ বিষয়বস্তুকে বাদ তো দিয়েছেই, অধিকন্তু ইসলাম বিরোধী বিষয়বস্তুকে সুপরিকল্পিতভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দিয়েছে। গত বছরের অল্প কয়েকটি বিষয় সংশোধন করা হলেও ২০২৪ সালের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী চিন্তাচেতনার সাথে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয় রয়ে গেছে। পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ইসলামী শিক্ষার নানা বিষয়। কর্তন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির সহায়ক বিভিন্ন অধ্যায় ও পাঠ। ইতোমধ্যেই ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও সোস্যাল মিডিয়ায় ইসলামী অঙ্গনসহ প্রায় সর্বমহলের জনগণ ওই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। আমরা জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সকল বিষয় বাদ দিতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। আগামী ৪ মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকায় দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে “বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্যপুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনার আয়োজন করবে।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ আমরা অত্যন্ত ব্যথিত মনে জানাচ্ছি, এখনো মাওলানা মামুনুল হক কারাবন্দী হয়ে আছেন। জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার হওয়া সত্ত্বেও এখনো তাকে সরকার জামিন দেয়নি। অনতিবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি হেফাজতের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মুফতী জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মীর ইদরিস, মাওলানা হারুন ইজহার, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতি বশির উল্লাহ, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মাওলানা তোফায়েল আহমাদ, মাওলানা এহসানুল হক প্রমুখ।