বিশিষ্ট সাংবাদিক-ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুর আর নেই

মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুর ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আজ শুক্রবার দুপুর ২:৪০ মিনিটে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরমের সভাপতি কবি মুনীরুল ইসলাম।

তিনি জানান, ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুর আজ শুক্রবার বেলা ২.৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। মরহুমের জানাযা জাতীয় প্রেসক্লাবে রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত হবে।

বিশিষ্ট এই ভাষা সৈনিকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম, লেখকপত্র, ঢাকাস্থ রাজবাড়ী জেলা সাংবাদিক সমিতি, লিটলম্যাগ প্রয়াস, ছড়াকাগজ পেরেক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নেরপত্রিকার পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক আব্দুল গফুর ছিলেন বিশিষ্ট ভাষা-সৈনিক, প্রবীণ লেখক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। জন্ম ১৯২৯ সনের ১৯ ফেব্রুয়ারী (আনুমানিক) তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ী) জেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল ফাল্গুন ও রমজান মাসের মঙ্গলবার। পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী ও শুকুরুন্নেছা খাতুন।

শিক্ষাজীবন:

অধ্যাপক আব্দুল গফুরের শিক্ষা জীবন শুরু হয় তদ্বীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের মকতবে। এরপর পাবনা জেলার তালিম নগর জুনিয়র মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ফরিদপুর ময়েজ উদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে ১৯৪৫ সনে অনুষ্ঠিত হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলা ও আসামের মধ্যে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে সরকারী নজরুল কলেজ) থেকে ঢাকা বোর্ডের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেন। ছাত্র জীবনেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ফাইনাল অনার্স পরীক্ষার মাত্র দু’মাস আগে ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা আন্দোলনের উদ্গাতা-প্রতিষ্ঠান তমদ্দুন মজলিসের কাজে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসাবে আত্মনিয়োগ করায় অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অতঃপর ১৯৫৮ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ইংরাজি বিভাগে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন। পরে ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি (সমাজকল্যাণে) এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন:

অধ্যাপক আবদুল গফুরের কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। জীবনের শেষ পর্যায়েও তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তবে এর মধ্যবর্তী সময়ে তিনি দীর্ঘকাল অন্য পেশায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ‘পাক্ষিক জিন্দেগী’তে তাঁর সাংবাদিক জীবনের সূচনা। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’-এর সহ-সম্পাদক ও সম্পাদক, এরপর যথাক্রমে ‘দৈনিক মিল্লাত’ (১৯৫৭) ও ‘দৈনিক নাজাত’ (১৯৫৮)-এর সহকারী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর আদি পূর্বসূরী দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমী)-এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট (১৯৫০-৬০) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি এক বছর সমাজ কল্যাণ অফিসার হিসাবে চট্টগ্রামে চাকরী করেন। পরে উক্ত চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ (১৯৬৩-৭০) এবং ঢাকা আবুজর গিফারী কলেজে (১৯৭২-৭৯) সমাজকল্যাণের অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘দৈনিক আজাদ’-এর বার্তা সম্পাদক, ১৯৭২-৭৫ ইংরাজি ‘দৈনিক পিপল’-এর সহকারী সম্পাদক, ১৯৭৯-৮০ ‘দৈনিক দেশ’-এর সহকারী সম্পাদক এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর প্রকাশনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘দৈনিক ইনকিলাব’-এর সূচনা (১৯৮৬) থেকে অদ্যাবধি এর ফিচার সম্পাদক পদে কর্মরত রয়েছেন।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

চীনের টিকা সিনোভ্যাকের অনুমোদন দিলো ঔষধ প্রশাসন

আনসারুল হক

ইমরান খানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী

আনসারুল হক

সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নূর নিউজ